মিলেট চাষ নিয়ে যা বললেন কৃষিবিদরা


মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান , : 25-05-2023

মিলেট চাষ নিয়ে যা বললেন কৃষিবিদরা

দেশে মিলেটের উৎপাদন খুব অল্প পরিসরে হচ্ছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মিলেট উৎপাদনের সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে সেচের সাহায্যে এই খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানো যায়। মিলেটের মধ্যে রয়েছে কাউন, চিনা, জোয়ার, বাজরা, রাগির মতো কয়েকটি ক্ষুদ্র দানাদার খাদ্যশস্য।  কৃষিবিদরা বলছেন, দেশে আবাদি জমির পরিমাণ, শ্রম ও বিনিয়োগের তুলনায় মিলেটের  উৎপাদন কম হওয়ায় চাষিরা এই খাদ্যশস্যটি চাষে তেমন আগ্রহ দেখান না। তারা আরও বলছেন, বর্তমানে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই অধিক ব্যয়ে মিলেট চাষে আগ্রহ নেই কারও। 

সংশ্লিষ্ট-বিশ্লেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে খাদ্যের ঘাটতির কথা চিন্তা করে ভুট্টা চাষের দিকে বেশি নজর দেওয়া যেতে পারে। কারণ যে একবিঘা জমিতে যে পরিমাণ মিলেট উৎপাদন হয়, ভুট্টা তারচেয়েও বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ভুট্টা খরার মৌসুমে সেচ ছাড়াই উৎপাদন করা যায়। আর বিশ্বব্যাপী ভুট্টার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও ভুট্টার চাষ বেড়েছে। 

এই বিশ্লেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ভবিষ্যতে সম্ভাব্য খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে  মিলেট চাষও করা যেতে পারে। কিন্তু দেশে এমনিতেই চাষের জমি কম। মিলেটের চাষ বাড়াতে গিয়ে যেন ধান, গম বা ভুট্টা চাষে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

দেশে যথেষ্ট পরিমাণে সেচব্যবস্থা থাকায় মিলেটের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না কৃষিবিদরা। তারা বলছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অনেক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল রয়েছে, যেখানে অনেক জমি খালি পড়ে থাকে। সেচব্যবস্থা নেই। বৃষ্টিও কম হয়। খরা মৌসুমই বেশি থাকে ওইসব অঞ্চলে। ফলে ওইসব অঞ্চলে যথেষ্ট মিলেট চাষ হয়ে থাকে। উৎপাদন খরচ কম থাকায় সে সব অঞ্চলের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ অনেকেই মিলেট চাষ করে। আমাদের দেশেও একটা সময় উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা ছিল। ওই সময় সেচ ব্যবস্থা না থাকায় উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মিলেটের আবাদ করতেন চাষিরা। কিন্তু এখন উত্তরাঞ্চলসহ দেশের কোথাও মঙ্গা নেই। দেশের সব অঞ্চলে সেচ ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত রয়েছে। ফলে মিলেট চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক কমে গেছে। বিভিন্ন জাতের ধানের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে মানুষ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কৃষিবিদরা বলছেন,  মিলেন নয়, ভুট্টা চাষেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

জানতে চাইলে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. জাফর উল্লাহ্ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘খাদ্য সংকট কাটাতে মিলেটের প্রতি জোর দিতে হবে বলে আমি মনে করি না। এর চেয়ে আমরা গম বা ভুট্টার প্রতি বেশি নজর দিতে পারি। আর যেখানে সহজেই সেচ ছাড়াই ভুট্টা চাষ করে বেশি লাভবান হতে পারি, সেখানে কেন মিলেটের আবাদ বাড়াতে হবে? মানুষের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন হয়েছে। এখন মানুষ আগের মতো গরিব-অসহায় নেই যে, কাউন খেয়ে থাকবে। তবে ভারতের মতো আমাদের দেশেও যদি অসংখ্য জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো, তাহলে মিলেটের আবাদ বাড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আমাদের তো সেই অবস্থা নেই। আমাদের জমির পরিমাণ খুবই কম।’

কৃষিবিদ ইনস্টিটিশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-এর মহাসচিব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ উইং) কৃষিবিদ মো. খায়রুল আলম (প্রিন্স) ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমাদের জমির পরিমাণ খুবই সীমিত। মিলেট চাষের প্রয়োজন রয়েছে। তবে ধান চাষের ক্ষতি করে মিলেট চাষকে উৎসাহিত করি না। ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটকে মোকাবিলা করতে হলে ভুট্টা চাষে বেশি জোর দিতে পারি। আমরা চাহিদার তুলনায় ২০ শতাংশ ভুট্টা উৎপাদন করে থাকি। ভুট্টার উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে হবে। খাদ্য ঘাটতির কথা মাথায় রেখে মিলেটের উৎপাদনও ধরে রাখতে হবে। তবে মিলেটে অবশ্যই ধান, গম বা ভুট্টার চেয়ে বেশি নজর দেওয়ার সুযোগ নেই।’

খাদ্য ঘাটতি কাটাতে মিলেট কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে, জানতে চাইলে খায়রুল আলম  প্রিন্স বলেন, ‘খাদ্য ঘাটতি কাটাতে যদি মিলেট ছাড়া অন্য কোনো বিষয় আমাদের না থাকতো, তবে আমরা এর প্রতি জোর দিতে পারতাম। কিন্তু আমাদের তো অন্য অপশন রয়েছে। মিলেট খরা মৌসুমে বা পানি বা সেচ ছাড়াই উৎপাদন হয়। তেমনি ভুট্টাও পানি বা সেচ ছাড়াই উৎপাদন হয়। আর মিলেটের তুলনায় ভুট্টার চাহিদা অনেক বেশি। তাহলে কেন আমি মিলেটের ওপর এত জোর দেবো?’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (বিজ) মো. আবু জুবায়ের হোসেন বাবলু ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ধান, গম, ভুট্টার জমিই যেখানে সংকট, সেখানে মিলেট চাষ করে কেন জমির অপচয় করবে মানুষ? আমাদের দেশে মিলেটের গুরুত্ব খুবই কম। জাতীয়ভাবেও এর তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। আর ভবিষ্যতেও গুরুত্ব পাবে বলে আমার মনে হয় না। খাদ্যসংকট মেটাতে মিলেটের চেয়েও লাভজনক খাদ্যশস্য আমাদের রয়েছে। যা আমরা সহজেই আবাদ করে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট দেখা দিলে, সেখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারি।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যাসোসিয়েটস (সি-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭১৫১১৯৪৪৪,
ইমেইল: dhakabusines@gmail.com