‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্প’ থেকে প্লট বিক্রি
শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ২৮ বছর। কিন্তু এতদিনে এই প্রকল্পের কোনো
বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন প্লটমালিকরা। প্রায় তিন দশক ধরে জমিতে
বিনিয়োগ করেও বাড়ি করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই প্রকল্পের পাঁচ শতাধিক প্লট
মালিক।
ক্রেতারা বলছেন, প্রায় ৫০ একর জায়গাজুড়ে
৫১৯ প্লট নিয়ে সিডিএ'র এই কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্লট বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী
ওয়াসার পানিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথা থাকলেও এখনপর্যন্ত এর কোনো উদ্যোগ নেয়নি
সিডিএ।
১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর
নদীর দক্ষিণ পাড়ে কর্ণফুলী (বামতীর) আবাসিক প্রকল্প নামে ৫১৯টি প্লট বরাদ্দ দেয় সিডিএ।
এ প্রকল্পের প্রজেক্ট প্রোফাইলে (পিপি) বরাদ্দ করা স্থানে নালা-নর্দমা, রাস্তাঘাট,
খেলার মাঠ, কবরস্থান, মার্কেট, নিরাপত্তা বেষ্টনী, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার সুপেয় পানি
সরবরাহ করাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলে উল্লেখ থাকে।
সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক কল্যাণ
সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘প্লট কেনার ২৮
বছরেও ঘর বানানোর স্বপ্ন পূরণ হলো না। প্রজেক্ট প্রোফাইলে গ্যাস, বিদ্যুৎ পানি সরবরাহের
অঙ্গীকার থাকলেও তারা কথা রাখেনি। পানির অভাবে জনবসতি গড়ে ওঠেনি। এ সমস্যা সমাধানে
সিডিএকে বারবার বলেছি। সংস্থাটির মধ্যে উদ্যোগ নেওয়ার কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছে না।’
জিয়া হাবীব বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত
হলে চট্টগ্রাম নগরে তীব্র আবাসন সংকট নিরসন হবে। পাশপাশি আলোকিত হবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের
প্রবেশ পথ। ইতোমধ্যেই প্রকল্প মালিকদের অনেকেই মারা গেছেন। ১৯৯৪ সালে সর্বোচ্চ মূল্য
দিয়ে এসব প্লট কেনা হয়েছে। এরপর ২৮ বছর পার হয়ে গেছে। এখন একটাই দাবি, সিডিএ যেন, সব
সমস্যার সমাধান করে ৫১৯ প্লট মালিককে প্লট বুঝিয়ে দেয়।’
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, যখন প্লট
বরাদ্দ দেওয়া হয়, তখন জমির উচ্চমূল্য ধরা হয়েছে।অনেকে সেই মূল্য বায়না দিয়ে বা কিস্তির
মাধ্যমে পরিশোধ করে প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন সাইজের প্লট নিয়েছেন। কিন্তু বছরের পর বছর
পার হয়ে গেলেও সেই প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এমনকি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য
নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি সিডিএ।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন,
‘২৮ বছর আগে আমি সিডিএ থেকে এই প্রকল্পে ৪ কাঠা জায়গা কিনেছি। কিন্তু কী কারণে আমরা বাড়ি তৈরি করতে পারছি না, সিডিএ
সে বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট করে কিছু বলছে না।’
প্লট নেওয়া আরেক ভুক্তভোগী ফারজানা নাসরিন
শোভা বলেন, ‘আমার স্বামী আমার নামে যখর প্লট কেনেন, তখন আমার বিয়ের বয়স মাত্র ৩ বছর।
আর এখন আমার মেয়ে বিয়ে দিলাম, ছেলের বউ আনলাম। কিন্তু এখনো সিডিএ'র এই প্লটে বাড়ি করতে
পারলাম না। এজন্য সিডিএ'র উদাসীনতাই দায়ী।’
এদিকে, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক
(এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘সিডিএ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। দীর্ঘদিন পরে
ওয়াসার পানি সমস্যার কথা বললে কি তাড়াতাড়ি সমাধান হবে? যেহেতু চিঠি পেয়েছি, বিষয়টি
এখন দেখবো। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।’
কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পে বিরুদ্ধে ক্রেতাদের
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী
কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা সিডিএর আবাসন প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছি। পুরনো মাস্টারপ্ল্যান
অনুযায়ী অনেক আবসন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। আমরা বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়
করে অসমাপ্ত আবাসন প্রকল্পগুলোর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। দীর্ঘদিন পানি সমস্যার কারণে প্রকল্পটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। তাই আশা করছি, পানি সংকটসহ সব ধরনের সমাধান করে দ্রুত প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ করা হবে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/