সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ব্যবসায়ীরা চিনি বিক্রি করছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, সরকারনির্ধারিত দামে বাজারে চিনি তো পাওয়া যাচ্ছেই না; উল্টো আগের দামের চেয়েও বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। ভোক্তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খুচরা বিক্রেতা দূষছেন ডিস্ট্রিবিউটরদের। আর তারা দায়ী করছেন কোম্পানিগুলোকে। রোববার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের মুদি দোকানি, ভোক্তা সাধারণ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্যাকেটজাত ও খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিকেজি প্যাকেটজাত ও খোলা চিনি আগের দামের চেয়ে ৩ টাকা কম দামে খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করতে পারবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা (শনিবার ৮ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। প্রতিকেজি প্যাকেটজাত চিনি ১১৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। খোলা চিনি প্রতিকেজি ১১২ টাকা থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন এই চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, প্রতিকেজি খোলা চিনি ১০৪ টাকা; আগে যা ছিল ১০৭ টাকা। আর প্যাকেট চিনি প্রতিকেজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৯ টাকা, যা আগে ছিল ১১২ টাকা।
সাধারণ ক্রেতারা জানান, তারা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। যে যেভাবে পারছে, ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ।
কোম্পানিগুলো এখনো সরকারনির্ধারিত দামের চিনি বাজারে ছাড়েনি। ফলে খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে ডিস্ট্রিবিউটর, সবাই মজুদ থাকা আগের চিনিই বিক্রি করছেন। বাজারে কবে নতুন নির্ধারিত দামের চিনি আসবে, সে ব্যাপারে তারা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
কাওরান বাজারে চিনি কিনতে এসেছেন শহিদুল। কাজ করেন বিজি প্রেসে। ঢাকা বিজনেসকে তিনি বলেন, ‘যার চুরি করা স্বভাব, সে সহজে ভালো হয় না। নির্ধারিত দামে তারা ব্যবসায়ীরা চিনি বিক্রি করছেন না। আমাদের কী বলার আছে? আমি একা প্রতিবাদ করে কী করবো? কোনো লাভ নেই। সরকারের উচিত ভালোভাবে মনিটরিং করা। যারা বেশি দামে চিনি বিক্রি করছেন, তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসাও সরকারের দায়িত্ব।’
চিনির এই নতুন দামের সুপারিশ নিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সহকারী সচিব হুমায়ুন কবির ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা শুধু দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমাদের কোনো প্রতিনিধি এখনো মনিটরিংয়ে যাননি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যদি আমাদের কোনো প্রতিনিধিকে চায় মনিটরিংয়ের জন্য; সেক্ষেত্রে আমাদের প্রতিনিধি মনিটরিংয়ে যেতে পারেন।’
এদিকে, চিনির দাম নিয়ে খুচরা চিনি বিক্রেতারা দূষছেন ডিস্ট্রিবিউটরদের। আর ডিস্ট্রিবিউটররা দূষছেন কোম্পানিকে। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তারা ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে নতুন দামের চিনি পাচ্ছেন না। ডিস্ট্রিবিউটররা এখন কোনো চিনিই দিচ্ছেন না তাদের। ফলে তাদের মজুদ থাকা আগের চিনিই তারা বিক্রি করছেন।
খুচরা চিনি বিক্রেতারা প্যাকেটজাত চিনি বর্তমান নির্ধারিত দামে তো বিক্রি করছেন না উপরন্তু আগের নির্ধারিত গায়ের রেটের চেয়ে ৩ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি করছেন। আগের প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনির গায়ের রেট দেওয়া আছে ১১২ টাকা। তারা বিক্রি করছেন ১১৫ টাকায়।
এ ব্যাপারে খুচরা বিক্রেতা মো. হালিম ঢাকা বলেন, ‘গায়ের যে রেট, সেই রেটে আমরা ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে নিয়ে আসি কিনে। এখন সেই দামে যদি বিক্রি করি, তাহলে আমরা কিভাবে চলবো? তিনি আরও বলেন, ‘ডিস্ট্রিবিউটররা আমাদের বলেন, গায়ের যে রেট দেওয়া আছে, সেই রেটে নিলে নিন, না নিলে বাদ দিন।’
চিনির ডিস্ট্রিবিউটর সোনালী ট্রেডার্সের মালিক মো. আবুল কাশেম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো নতুন করে আমাদের চিনি দিচ্ছে না। আমাদের কাছে আগের যেসব চিনি আছে , সেগুলোই বিক্রি করছি। প্যাকেটজাত চিনি প্রতিকেজি ১০৯ টাকা ৫৩ পয়সা এবং খোলা চিনি ১১২ টাকা ডিউ রেটে আমাদের দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। আমরা কিছু লাভ ধরে বিক্রি করছি।’
মেঘনা গ্রুপের টেরিটরি ম্যানেজার আশরাফুল ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আপাতত চিনির দাম নিয়ে আমরা দ্বিধাধন্দে আছি। যে কারণে আমাদের কোম্পানি চিনি সরবরাহ আপাতত স্থগিত করেছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া নতুন দাম নিয়ে এখনো খুচরা বিক্রেতা, ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগু একমত হতে পারেনি।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রশাসন ও অর্থবিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমাদের মনিটরিং টিম ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে। যারা চিনি বেশি দামে বিক্রি করছেন, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইআইটি অনুবিভাগ, (অবা-৫ শাখা)-এর যুগ্ম নিয়ন্ত্রক শামিমা আক্তার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করছে। যারা নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে চিনি বিক্রি করছেন, তাদের ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/