২ মাসেই কোটি টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি


মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা , : 01-04-2023

২ মাসেই কোটি টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি

অত্যন্ত সুস্বাদু আর পুষ্টিকর ফল স্ট্রবেরি চাষ করে প্রথমবারেই সফল হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রুহুল আমিন রিটন। ভালো ফলন হওয়ায় লাভজনক চাষে পরিণত হয়েছে স্ট্রবেরি। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ রসাল ফল স্ট্রবেরি খুবই জনপ্রিয়। দেশের বাজরেও এই ফলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয়ভাবেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা।

জীবননগরের রুহুল আমিন রিটন প্রথমবারের মতো ড্রাগনের সাথী ফসল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ড্রাগন বাগানের ৪০ বিঘা জমিতে ৯০ হাজার স্ট্রবেরির চারা রোপণ করেন। বৈরি আবহাওয়া ও ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫ হাজার চারা মারা যায়। বর্তমানে তার জমিতে আছে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার স্ট্রবেরি গাছ। প্রতিটি গাছ থেকে ৬০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত স্ট্রবেরি ফল উৎপাদন হবে। সেই হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার কেজি স্ট্রবেরি উৎপাদনের আশাবাদী রুহুল আমিন।


তরুণ এই উদ্যোক্তা বলেন, আমি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে খয়েরহুদা গ্রামের মাঠে ৪০ বিঘা জমিতে ড্রাগনের সাথী ফসল হিসেবে প্রায় ৯০ হাজার স্ট্রবেরির চারা দিয়ে চাষ শুরু করি। এরপর বৈরি আবহাওয়া, ছত্রাকজনিত কারণসহ বিভিন্ন কারণে রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার চারা মারা গেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাকি গাছগুলোতে ফুল আসতে শুরু করে। এরপর কিছুদিন পর গাছে ফল আসা শুরু হয়। গাছগুলো থেকে ভালো পরিমাণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, প্রায় প্রতিটি গাছেই সাদা ফুল, সবুজ কাঁচা ফল আর পাঁকা লাল স্ট্রবেরি ফল গাছে শোভা পাচ্ছে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিক থেকে ফল সংগ্রহ ‍শুরু হয়েছে, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সংগ্রহ করা যাবে। প্রথম দিকে আমি ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেছি। বাজার দর কমে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা কেজি পেলেও ভালো একটা লাভের আশা করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কেজি স্ট্রবেরি ফল বিক্রি করা হয়েছে। যার গড় বাজার মূল্য কোটি টাকার কাছাকাছি। ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে রাজধানী ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারী ব্যবসায়ীরা কিনে নিচ্ছেন এ ফল।

রুহুল আমিন রিটন আরও বলেন, আমার এই বাগান দেখে অনেকে স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। বাইরের জেলা থেকেও অনেক মানুষ আসছেন প্রতিনিয়ত বাগান দেখতে ও চাষের পরামর্শ নিতে। আমার এই স্ট্রবেরি ও ড্রাগন বাগানকে কেন্দ্র করে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ১০০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন।


বছরে কয়েক ধাপে ফুল আসে স্ট্রবেরি গাছে। একদিকে ফুল আসে, ফল ধরতে না ধরতেই অন্য দিকে ফুল আসে। বছরে তিন থেকে চারবার ফল দেয়। স্ট্রবেরি ফলটি সুস্বাদু, রসালো, মিষ্টি ও সুগন্ধি যুক্ত হওয়ায় সব বয়সের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবর বলেন, স্ট্রবেরি বিদেশি ফল হওয়াতে দেশে পাওয়া যেত খুবই কম। এখন স্থানীয়ভাবে চাষ হওয়ার কারণে এই ফল কিছুটা সহজলভ্য হয়েছে। এই ফল দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ রসাল এই ফল স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। চুয়াডাঙ্গাতে এই ফল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে এই ফলের চাষ যত বাড়বে তত ভোক্তা পর্যায়ে এর সহজলভ্যতা বাড়বে। বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন যত বাড়বে, ফলের দাম তত কমতে থাকবে। দাম কমলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার আওতায় চলে আসবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা মার্কেটিং ও কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম বলেন, স্ট্রবেরি বিদেশি জাতের উচ্চ মূল্যের একটি ফল। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গাতে স্ট্রবেরি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাজারেও এই ফল বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। স্ট্রবেরি ফল শিশুদের খুব পছন্দের এবং অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় দেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্ট্রবেরি যারা চাষ করছেন তাদের উৎপাদিত ফল বাজারজাতকরণে কোনো প্রকার সমস্যা হলে বা কোনো সহযোগিতা লাগলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করবো।


চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, চুয়াডাঙ্গায় স্ট্রবেরি চাষে সফলতা দেখতে পারছি। আমরা স্ট্রবেরির চাষ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করছি, স্ট্রবেরির রোগবালাই সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করে চলেছি। কৃষকরা খুব সহজে স্ট্রবেরি চাষ করে লাভবান হতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

ঢাকা বিজনেস/এইচ


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যারিস্টোক্র্যাটস (লেভেল-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৩২৯৬৮১৬২৫,
ইমেইল: dhakabusines@gmail.com