সম্প্রতি
৩০ বছর বয়সে ভারতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক হয় সূর্যকুমার যাদবের। ২০২২ সালে
এশিয়াকাপ পর্যন্ত তিনি ২৬টি ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি খেলেছেন রোহিত
শর্মার নেতৃত্বে। এই ২৬টি ম্যাচের মধ্যে ৮টিতেই নিজের ইনিংসের প্রথম বলে
চার অথবা ছক্কা মেরেছেন। ২০২২ সালে পুরো ভারতীয় দল মিলে যত ছক্কা মেরেছে,
একাই তারচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন তিনি।
সূর্যকুমার
এক ইন্টারভিউতে জানিয়েছেন, বোলার বল ডেলিভারি দেওয়ার আগেই ওই বল খেলার
জন্য অন্তত তিন রকমের শট মাথায় রিহার্সেল দেন তিনি। পাকিস্তানের আসিফ আলীর
ছক্কা প্র্যাকটিসের কথাও কারও অজানা নয়। দুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ার মার্কাস
স্টয়নিস ১৭ বলে ফিফটি করে অজিদের নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচই জিতিয়ে দিলেন।
নিউজিল্যান্ডের ফিন এলেন ওপেনিংয়ে নেমে ১৬ বলে ৪২ করে খেলাই পাল্টে দিলেন
চোখের পলকে।
বাংলাদেশ
তো হারলই সাউথ আফ্রিকার রাইলি রুশোর তাণ্ডবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের
দলগুলোর দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকান। প্রায় প্রত্যেকটি দলেই এমন তিন/চার জন
ব্যাটসম্যান আছেন, যারা প্রথম বল থেকেই বাউন্ডারি মারতে পারেন। যেকোনো সময়
যেকোনো পিচে ১৮০ থেকে ২০০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করতে পারেন। যখন-তখন হেরে
যাওয়া ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারেন। এমন কোনো ব্যাটসম্যান নেই শুধু একটা টিমে।
সেই টিমের নাম বাংলাদেশ।
শূন্য দশকের শুরুর দিকে একটানা ৪৭টি ওয়ানডে হেরেছিল টাইগাররা। তখন টেস্টে তিন দিনে ইনিংস ব্যবধানে হার ছিল নিয়মিত ঘটনা। যখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এলো, তখন আশরাফুলরা ভেবেছিলেন, এই ফরম্যাট বোধহয় বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। এখানে টেস্টের মতো ধরেও খেলা লাগে না, ওয়ানডের মতো ইনিংস বিল্ড-আপও লাগে না। খালি উইকেটে যাবে আর মারবে। কিন্তু যতই দিন গড়ালো ততই স্পষ্ট হলো, টি-টোয়েন্টি আসলে স্পেশাল স্কিলের খেলা।
এখানে
প্রথম বল থেকেই আক্রমণে যেতে হবে। ১০টি বল দেখে খেলে পরবর্তী সময়ে
মেরে-খেলে পুষিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যান্য দল যখন টি-টোয়েন্টি
স্পেশালিস্ট প্লেয়ার গড়ে তুলছে, তখন আমরা এখনো মান্ধাতার আমলের ১২০/১৩০
স্ট্রাইকরেটেই পড়ে আছি। খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, ১২০ স্ট্রাইকরেটের দিন
শেষ হয়ে গেছে। টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত ম্যাচ জিততে হলে ১৪৫ ক্যারিয়ার
স্ট্রাইকরেটের ব্যাটার আবশ্যক।
অনেকে
বলতে পারেন, বোলারদের কথা কেন বলছি না। কারণ আছে। আপনি আগে ব্যাটিং করলে
স্কোরবোর্ডে টেনেটুনে ১৫০ থেকে ১৬০ রান করবেন আর বোলারদের বলবেন সেটা
ডিফেন্ড করতে, তা আসলে এই যুগে আর চলে না। এমন স্কোরের ম্যাচ ১০টা হলে তার
মধ্যে একটা/দুটো হয়তো বোলাররা জিতিয়ে দিতে পারবে। এমন দুই-একটি ম্যাচ তো
জেতাচ্ছেন তাসকিন-মুস্তাফিজরা। কিন্তু দিন দিন টি-টোয়েন্টি ক্রমেই
ব্যাটসম্যানদের খেলা হয়ে উঠছে। মূল দায়িত্বটা ব্যাটসম্যানদেরই নিতে হবে।
ছোট বাউন্ডারি আর পাটা পিচে আপনি স্কোরবোর্ডে অন্তত ১৮০ রান না করে যদি
বোলারদের বলেন ডিফেন্ড করতে, তাহলে সেটা খুবই অন্যায় আবদার।
আপনি
২০০ রান চেজও করতে পারবেন না, আবার আগে ব্যাট করলে স্কোরবোর্ডে নিয়মিত ১৮০
রানও জমা করতে পারবেন না, তাহলে এই ব্যাটসম্যান দিয়ে আমাদের লাভ কী? কথাটা
পানির মতো পরিষ্কার করে বলতে চাই। বাংলাদেশের এমন ব্যাটার নাই। যতদিন এমন
ব্যাটার আসবে না, ততদিনই আমরা করুণভাবে হারবো। সহজ হিসাব। আর টি-টোয়েন্টিই
ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। এই ফরম্যাটে ভালো করতে না পারলে আপনি বিশ্বক্রিকেটে
ক্রমাগত অচ্ছুৎ হয়ে পড়বেন।
লেখক: বিশ্ব রাজনীতি বিষয়ক কনটেন্ট ক্রিয়েটর