‘পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ছাড়া স্থিতিশীলতা থাকবে না’


মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান , : 16-03-2023

‘পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ছাড়া স্থিতিশীলতা থাকবে না’

পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে আনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন ইউনিয়ন ব্যাংকের সচিব আলী হোসেন ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ না করলে পুঁজিবাজারের ব্যাংকখাতসহ কোনো খাতই সামগ্রিক অর্থে স্থিতিশীল থাকবে না।  বিনিয়োগকারীদের এই বিষয়টি বুঝতে হবে। তাদের দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে।’ সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে তার কার্যালয়ে ঢাকা বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

কোম্পানি সচিব বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাজার অনেক সময় গেম্লিংয়ের কারণে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু ব্যাংকের শেয়ারে কেউ সহজে গেম্লিং করতে পারে না। যে কারণে গেম্লাররা ব্যাংক খাত থেকে দূরে থাকে। তাই অন্যান্য খাতের চেয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকখাতে বিনিয়োগ করা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই বিষয়টি বুঝতে চায় না। ফলে ব্যাংকের শেয়ার দর কম থাকে। যেসব কোম্পানির গেম্লিং করে শেয়ার দর বাড়ান গেম্লাররা, সেসব শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা না বুঝে বেশি যায়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি অন্যান্য কোম্পানিতে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছি না। বিনিয়োগকারীরা যেন ব্যাংকখাতসহ সব খাতেই জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করেন, তবেই তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার  আশঙ্কা কম থাকবে।’

আলী হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর ব্যাংকগুলো সাধারণত ১০ থেকে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের দেয়।  ব্যাংক খাতের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ৫০ শতাংশ বা তারও বেশি লভ্যাংশ দেয়। কিন্তু সেই ডিভিডেন্ড সুনিশ্চিত না। কিন্তু ব্যাংকে বিনিয়োগ করলে সে বছর শেষে ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ডিভিডেন্ড পাবে, এটা সুনিশ্চিত। এটা জেনেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকখাতে বিনিয়োগ করতে চান না। তাদের উচিত ব্যাংকখাতসহ ফান্ডামেন্টাল কোম্পানিগুলোতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা। আর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর বাইরেও আমাদের আর একটি রেগুলেটরি বডি আছে, বাংলাদেশ ব্যাংক। রেগুলেটরি বডি-কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু রেস্ট্রিকশন দিয়ে দেয়। সে কারণে ব্যাংক চাইলেও ইচ্ছামতো ডিভিডেন্ড দিতে পারে না। সেখানে জবাবদিহি করতে হয় ব্যাংককে।’

ব্যাংক খাতের সাধারণ শেয়ারহোল্ডারের  সংখ্যা ৫ শতাংশের নিচে উল্লেখ করে আলী হোসেন বলেন, ‘ডিপোজিটর হচ্ছে ৯৫ শতাংশের ওপরে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডিপোজিটরদের টাকা দিয়েই ব্যাংক ব্যবসা করে। এখন সেই ডিপোজিটরদের আমরা দিচ্ছি মাত্র ৬ শতাংশ ইন্টারেস্ট। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দিচ্ছি ১০ শতাংশ বা তার ওপরে ইন্টারেস্ট। এখানেও ডিপোজিটরদের সঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রফিট পাওয়ার ক্ষেত্রে তারতম্য দেখা দেয়।  আমি মনে করি, ডিপোজিটরদের ইন্টারেস্ট পাওয়ার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সমান না হলেও তাদের কাছাকাছি প্রফিট দেওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রফিট পেতে পছন্দ করেন। এখান থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে। খুব অল্প সময়ে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকগুলো থেকে খুব বেশি লাভবান হওয়া যায় না। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন অনেক বেশি থাকে। তাই চাইলেও খুব বেশি প্রফিট দেওয়া যায় না। ব্যাংকে অনেকগুলো রিজার্ভ, ফান্ড রাখার খাত রয়েছে। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন অনুযায়ী রিজার্ভ, ফান্ডে টাকা রাখতে হয়। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চাইলেও ব্যাংক খুব বেশি প্রফিট ব্যাংক তাদের দিতে পারে না।’

ইউনিয়ন ব্যাংকের সচিব বলেন, ‘আমরা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছেড়েছি। সেখানে কমিশনের রুলস অনুযায়ী প্রথম দিন ১১ টাকার ওপরে লেনদেন হয়নি। তারপরে ১৪/১৫ টাকা পর্যন্ত  দাম উঠেছিল। শুধু আমাদের ব্যাংক নয়, অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি পড়ে আছে। আবার ফ্লোর প্রাইজের কারণেও আটকা পড়ে আছে শেয়ার দর। আমরা ৪২৮ কোটি টাকা নিয়ে শেয়ার মার্কেটে এসেছি। চতুর্থতম সর্বোচ্চ টাকা নিয়ে আমরা শেয়ার মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয়েছি। ফলে এতবড় পেইড আপ ক্যাপিটালের শেয়ার, চাইলেও দর দ্রুত বাড়ানো যায় না।’

আলী হোসেন বলেন,  ‘আমরা যদি ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকা নিয়ে তালিকাভুক্ত হতাম, তাহলে অটোমেটিক্যালি আমাদের ব্যাংকের শেয়ার দর ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা উঠে যেতো। শেয়ারহোল্ডাররাও চিন্তা করে যে ব্যাংকের এত বড় পেইডআপ ক্যাপিটাল, সে ব্যাংক আমাদের কীই-বা প্রফিট দিতে পারে। যে কারণে আমাদের শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি চলে গেছে। আমরা তো জোর করে কাউকে শেয়ার কেনাতে পারবো না। তবে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে আমরা ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিলাম। এরমধ্যে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ও ৫ শতাংশ স্টক বা বোনাস ডিভিডেন্ড। ক্যাশ ডিভিডেন্ডটা দেওয়া হয়েছে। বোনাস ডিভিডেন্ডটা দিতে এখনো কমিশন থেকে অনুমোদন পাওয়া যায়নি।  শিগগিরই কমিশন থেকে বোনাস ডিভিডেন্ড দেওয়ার ব্যাপারে অনুমোদন পাবো। আর বোনাস ডিভিডেন্ডটা দেওয়া হলে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যারিস্টোক্র্যাটস (লেভেল-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৩২৯৬৮১৬২৫,
ইমেইল: dhakabusines@gmail.com