জ্বালানি তেল আমদানিতে এলসি (Letter of credit বা প্রত্যয়ণপত্র) খোলার জটিলতা কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক ও জ্বালানি-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এখন আমদানিকারকেরা এলসি খুলছেন। রমজানকে সামনে রেখে জ্বালানি তেলের সংকট যেন কোনোভাবেই না হয়, সেজন্য তারা প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছেন। পাশাপাশি এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সাধারণত জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়। এলসি খুলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও ব্যাংকগুলো ডলার কেনার জন্য সার্পোট পেয়ে আসছে। জ্বালানি তেল আমদানিতে বেশির ভাগ এলসি করে দেয় সরকারি ব্যাংকগুলো। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে খুব কম এলসি খোলা হয়।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পরিচালক (অর্থ) ও যুগ্ম সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘রমজানে জ্বালানির মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, সেখানে আমরা পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে পারবো। ব্যাংকগুলো জ্বালানি তেল আমদানিতে এলসি খুলতে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করছে। তবে আগে এলসি খুলতে অনেক সমস্যা হয়েছিল। এখন সেই সমস্যা অনেকটাই কেটে গেছে।’
বিপিসি পরিচালক আরও বলেন, ‘মাঝেমধ্যে দুই/একদিন দেরি হয়। এটা কোনো সমস্যা না। আর আমরা বেশিরভাগ এলসি রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি ব্যাংকে খুলি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(পিডিবি) ফার্নেস অয়েল বা ডিজেল যে পরিমাণ আমাদের কাছে ডিমান্ড করে, তা আমরা সরবরাহ করছি। আশা করি, রমজানেও এর ব্যতিক্রম হবে না।’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)-এর সদস্য (উৎপাদন) এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘রমজানের প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু করেছি। বড় ধরনের কোনো সমস্যা না হলে যে প্রস্তুতি আছে, তাতে পুরো রমজানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি মাসেই এলসি খোলা হয়। প্রতি মাসেই জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। অর্থাৎ জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে আমরা পরিশ্রম করছি। আর এখন ডলারের মান স্টাবল অবস্থায় আছে। আশা করি, আগামীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না।’
রূপালি ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপল অফিসার এহতেশামুজ্জামান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের দিচ্ছে। জ্বালানি তেলের সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আমরা শতভাগ সাপোর্ট পাচ্ছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের ইমপোর্ট সবসময় হচ্ছে। যখন যা দরকার হবে, তখন তা করা হবে। প্রয়োজন বুঝে সতর্কতার সঙ্গে ডলার সরবরাহ করছি। তবে যেনতেনভাবে ডলারের ব্যবহার করছি না। সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেই এলসি খোলা হচ্ছে। কোনো পণ্য আমদানিতেই এলসি খোলা বন্ধ নেই।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘যেসব পণ্য আমদানি অপ্রয়োজনীয় মনে হয়, সেসব ক্ষেত্রে হয়তো ব্যাংকগুলো সতর্ক রয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলোরও তো এলসি ও ডলার সরবরাহের একটি বিষয় আছে। ব্যাংকগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী এলসি খুলছে। আর যেগুলো জাতীয় অগ্রাধিকারের বিষয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে তো বাংলাদেশ ব্যাংক সাপোর্ট দিয়েই যাচ্ছে।’