এই ‘ডট দল লইয়া আমরা কী করিবো’


উদয় হাকিম , : 26-02-2025

এই ‘ডট দল লইয়া আমরা কী করিবো’

৩০০ বলের খেলা ওয়ানডে। যেখানে ১৮১ বল ডট। তার মানে ১৮১ বল থেকে কোনো রান আসেনি। বাকি ১১৯ বল থেকে বাংলাদেশ তুলেছে ২৩৬ রান। দারুণ ফর্মে থাকা নিউজিল্যান্ডের জন্য যা ছিল ডাল-ভাত। আর তাই ৫ উইকেট এবং ২৩ বল হাতে রেখেই জিতেছে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। এটা গেলো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দ্বিতীয় ম্যাচ। যেটা ছিল বাঁচা মরার লড়াই, ওই ম্যাচ হারলে টৃর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়ার কথা। নিয়েছেও।  

প্রথম ম্যাচে ৩৫ রানে নেই ৫ উইকেট। ২২৯ রানের টার্গেট ছিল ভারতের কাছে ছেলেখেলার বিষয়। হয়েছেও তাই। ৬ উইকেটে হার বাংলাদেশের।  

ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। একটা দল খারাপ খেলতেই পারে। বড় দলও বাজেভাবে হারে। কিন্তু সেই খারাপ খেলাটা যখন নিয়মিত বিষয় হয়ে যায়; তখন মনে করতে হবে টিমটাই খারাপ, পুরো দলেই অসুখ।

ইএসপিএন এর পেইজে গিয়ে দেখালাম সবশেষ ছয় ম্যাচ টানা হেরেছে বাংলাদেশ। আগেরগুলোও হেরেছে কি না তাৎক্ষনিক বের করতে পারিনি। 

মাঝখানে কিছুদিন বলা হতো ওয়ানডেতে বাংলাদেশ শক্তিশালী দল। তাহলে সেই দলটার এমন হতচ্ছিরি অবস্থা কেন? আগে হলে সবাই একযোগে নাজমুল হোসেন পাপনের ঘাড়ে দোষ চাপাতেন। এখন দলের এই অবস্থার জন্য দোষটা কার?

হয়তো বলবেন বোর্ডের এখানে দায় নেই। মানলাম। কোচিং স্টাফ? তাদের তো দায় আছে। বোলাররা খুব ভালো করছেন, তবে ব্যাটসম্যানরা খুব খারাপ করছেন। এ অবস্থায় ভালো দুজন ব্যাটিং কোচ দরকার ছিল। এই দলে সেটা নেই। কোনো রকম কাজ চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা’র কোচিং স্টাফ। 

প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। তার পারফরমেন্স অনেক দিন ধরেই দেখছি আপ টু দা মার্ক নয়। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তাদের কাছে দুই ম্যাচ সিরিজের সব ম্যাচ হেরেছে! নিজ দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি ফেল করেছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১১৬ রান করলে জিততো বাংলাদেশ। পারেনি। সুযোগ ছিল ১২.৪ ওভারের মধ্যে জিতলে সেমিফাইনালে যাওয়ার। এই কোচ সেই সাহসও দেখাতে পারেন নি। দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেও জেতার মানসিকতা দেখা যায় নি। 

অবাক বিষয় হলো টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশের দিকে। তারা যদি আফগান্স্তিানকে হারাতে পারতো- তাহলে অস্ট্রেলিয়া সেমিতে যেতো। কিন্তু অষ্ট্রেলিয়া দেখেছিল- এদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না। একই অবস্থা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও। পাকিস্তান তাকিয়ে ছিল নিউজ্যিলান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতলে পাকিস্তানেরও একটা আশা বেঁচে থাকতো সেমিতে যাওয়ার। পাকিস্তানের দর্শকরাও  দেখলো এই দল দিয়ে কিচ্ছু হবে না।

যাহোক, যত দোষই হোক নিজের দেশ, নিজেদের দল, নিজেদের খেলোয়াড়। মন খারাপ করলেও পরক্ষনেই সব ভুলে যান সমর্থকেরা। বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে কথা বললে অনেকেই রেগে যান। মাথায় রাখতে হবে- অভিমান করা তাহারই সাজে, ভালোবাসে যে। এই খেলোয়াড়েরা কোনো জয় পেলে পুরো দেশ তাদের মাথায় নিয়ে নাচে। তাহলে সমর্থকেরা মন খারাপ করলে তার দায়-ও নিতে হবে। 

যখন একটা দল খারাপ সময় পার করে তখন তার পাশে থাকতে হয়- এটা যেমন সত্য; তেমনি ওই খারাপ সময়ে সমর্থকেরাও নানা কথা বলবেন, নানা পরামর্শ দেবেন। সেগুলোও আমলে নেয়া উচিত। 

অধিনায়ক শান্তর পারফরমেন্স নিয়েও সোস্যাল মিডিয়াতে নানা গুঞ্জন। অধিনায়ককে তো এদাদশ থেকে বাদ দেয়া যায় না, তাই হয়তো শান্ত একাদশে থেকেই যাচ্ছেন। এখানে একটা বিষয়ে অন্তত শান্তর দায় আছে। দেশ ছাড়ার সময় মিডিয়াকে বলে গিয়েছিলেন- চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যাচ্ছেন। যেটা ছিলো চরম হাস্যকর একটা কথা। অধিনয়াক নিশ্চয় তার দলের শক্তি সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। সাম্প্রতিক পারফরমেন্সও তার বিবেচনায় থাকে। তিনি বলতে পারতেন আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য সেমিফাইনাল..। তা না করে প্রত্যাশার পারদ তুলে দিলেন চরমে।   

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বাংলাদেশ দল, দলের পারফরমেন্স দেখে অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার নানা কথা বলছেন। কেউ বলছেন দলটা জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ডের মতো পিছিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আঙ্গুল তুলেছেন দুই সিনিয়র খেলোয়াড় মুশফিক এবং মাহমুদুল্লাহর দিকে। কেউ কেউ বলেছেন – তাদের অবসরে যাওয়া উচিত। 

বিশ্বের নামকরা সব খেলোয়াড়েরা নিজেদের অবসরের সময়টা ভালো বুঝেন। ফর্মের তুঙ্গে থেকে সাঙ্গাকারা, মাহেলা এমনকি বিশ্বের নামকরা সব খেলোয়াড়েরা অবসরে গিয়েছেন। আমাদের মাশরাফি, সাকিব সেটা করেন নি, বোঝেননি। অপেক্ষা করেছেন নিজেরা কখন অপাংতেয় হবেন তখন বিদায় নেবেন। তামিম প্রথমে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সবাই সেটাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন। অবসর ভেঙ্গে আবার ফিরে আসার ফলও ভালো হয় নি। দেরিতে হলেও তিনি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সময় বুঝে নিজের সম্মান নিয়ে অবসরে গেছেন।  

তবে আামাদের পঞ্চপান্ডবের বাকি দুইজন এখনো খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। মুশফিক আর রিয়াদ তারা অবসরের নাম মুখে আনছেন না। ওদিকে বিসিবি’র কাছেও এ দুজন অনেকটা গলার কাঁটা। এদের রয়েছে বিশাল ভক্ত বাহিনী। দল থেকে বাদ পড়লে ভক্তরা সরব হবে। দল খারাপ করলে তাদের না নেয়ার কারণে খারাপ করেছে বলে সরগোল করবে। তবে, তাদের বাজে পারফরমেন্স এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং বিসিবিকে কাছে যৌক্তিক জায়গা করে দিয়েছে। সেই সুযোগটা চাইলে বিসিবি নিতে পারে। 

আগামি দিনে দলকে শক্ত করে গড়ে তুলতে হলে বিসিবিকে এবার কঠোর হতেই হবে। মনিব হিসেবে কোচদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিতে হবে। দলে আবারো মনোবিদের পরামর্শ দরকার। মাঠে নামার আগেই কেন তারা আউট হওয়ার চিন্তায় থাকে। খুঁজে বের করতে হবে জেতার মানসিকতা নেই কেন? কে কি মনে করলো না ভেবে মুশফিক-রিয়াদকে বাদ দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে। সেরা মানের ব্যাটিং কোচ নিয়ে শক্ত করতে হবে ব্যাটিং ভিত।

আগামীকাল বিদায়ী ম্যাচে বাংলাদেশ খেলবে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে। এ টুর্নামেন্টে যেহেতু কোনো আশা নাই- তাই এই ম্যাচে মুশফিক রিয়াদকে বাদ দিয়ে ইমন, আফিফ, নাসুম এদের সুযোগ দিতে হবে। ভবিষ্যতে তাকাতে হবে তরুণদের দিকে। গত বিপিএলে আলিস খুব ভালো করেছেন। তার বোলিংও ভালো। পরবর্তীতে তাকেও সুযোগ দিতে হবে। সম্ভাবনমায় আরো যারা আছেন তাদের সুযোগ দিন। দেশের মানুষের আবেগ ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে যারা দলটাকে নিজেদের সম্পদ মনে করছিলেন তাদের ছেঁটে ফেলুন। কারণ এই ‘ডট দল লইয়া আমরা কী করিবো?’

লেখক: সম্পাদক, ঢাকা বিজনেস


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যারিস্টোক্র্যাটস (লেভেল-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৩২৯৬৮১৬২৫,
ইমেইল: dhakabusines@gmail.com