দারিদ্র্যের বাধা পেরিয়ে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন টাঙ্গাইলে মেধাবী শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। প্রাইভেট পড়িয়ে ও পরিবার, শিক্ষকসহ বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় টাঙ্গাইল সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সীমা। এর ফলে অদম্য সীমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো।
সীমা আক্তার টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের কুরনি গ্রামের বাসচালক আনিছুর রহমানের মেয়ে। তারা সেখানে একটি টিনের ঘরে ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। স্কুল ও কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন সীমা। সে কারণে শিক্ষকরাও তাকে সব সময়ই সহযোগিতা করতেন। সীমা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। এখন তিনি টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ চান।
সীমা ২০২৪ সালে মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর আগে, কুরনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুরনি জালাল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
প্রত্যেক পরীক্ষায় ভালো ফল করায় বৃত্তিও পেয়েছেন সীমা। তবে তার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা সীমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল একমাত্র মেয়ে পড়ালেখা শেষ করে দেশের সেবা করবে। সীমারও স্বপ্ন ছিল মানুষের পাশে থাকার।
সীমার বাবা আনিছুর রহমান বলেন, মেডিক্যালে চান্স পাওয়ায় আমি অনেক খুশি। অনেক কষ্ট হলেও মেয়েকে মেডিক্যালে পড়াবো। আমার মেয়ে বড় হয়ে যেন জনগণের সেবা করতে পারে, এই কামনা করছি।
সীমার মা সালমা বেগম বলেন, সীমা তাদের একমাত্র সন্তান। ছোটবেলা থেকেই সে অনেক মেধাবী। কিন্তু দারিদ্র্যের জন্য আমরা তাকে তেমন সহযোগিতা করতে পারিনি। তারপরও তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। করোনার সময় থেকে স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাবো। সে পথ আরও প্রসারিত হলো।
এ ব্যাপারে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ শিক্ষার্থী সীমা আক্তার বলেন, আমার আর্থিক দিক থেকে অনেক সমস্যা ছিল। নিজেও প্রাইভেট পড়িয়েছি। অনেক সময় আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে কটূ কথাও শুনতে হয়েছিল। সব মিলিয়ে আমি মেডিক্যালে চান্স পাওয়ায় খুশি। তবে এখনো অনেক পথ বাকি রয়েছে। ডাক্তার হয়ে সকলের সেবা করতে চাই।
কুরনি জালাল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের মিয়া বলেন, সীমা খুবই মেধাবী। তাকে আমরা সব সময়ই সহযোগিতা করতাম। মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা খুশি।