চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা কম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য জানা গেছে।
সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে, রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা কম। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে কমেছে শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ।
এদিকে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে এই ঘাটতির জন্য বিশেষজ্ঞরা বিগত সরকারের আমলে নেওয়া অস্বাভাবিক বড় রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাকে দায়ী করেছেন।
তাদের ভাষ্য, জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পরবর্তী মাসগুলোতে অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি না ফেরাসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাঠ পর্যায়ের অফিসে কর্মকর্তাদের কার্যক্রম ধীরগতি হয়ে যাওয়াও এর পেছনে অবদান রেখেছে।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ গণমাধ্যমকে বলেন, গত সরকারের সময়ে বাস্তবতা বিবেচনা না করেই বড় রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। যার কারণে এখন প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার গ্যাপ দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে অর্থনীতিতে একটা প্রভাব পড়েছে। একদিকে ব্যবসায়ে গতি কম, অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ের আদায়কারী অফিসগুলোর মধ্যেও একটা গা-ছাড়া ভাব রয়েছে। এটিও রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশিত গতি না আসার অন্যতম কারণ।
এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে। ফলে আদায়ে প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। আবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বড় প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় কমে যাওয়াসহ বেশ কয়েকটি কারণে আদায় কমে গেছে।
এনবিআর কর্মকর্তারা আরও জানান, চলতি অর্থবছর আইভাস থেকে রাজস্ব আদায়ের হিসাব নেওয়া হচ্ছে। ফলে মাঠ পর্যায়ের কোনো অফিসে বাড়তি কোনো রাজস্ব দেখানোর সুযোগ নেই।
ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি মন্থরতা রয়েছে উল্লেখ করে এনবিআরের ভ্যাট শাখার সাবেক সদস্য আলী আহমেদ বলেন, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাটছাঁট হয়েছে। আবার অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগেও গতি নেই। এসব কারণে ভ্যাট আদায় কম হচ্ছে।
এ অবস্থায় রাজস্ব আদায়ের গতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বরে আয়কর আদায় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ এবং আমদানি কর প্রায় ১০ শতাংশ। কিন্তু আলোচ্য সময়ে ভ্যাট আদায় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামী মাসগুলোতে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় বাড়তে পারে। এতে অর্থনীতির গতি বাড়বে।