যে হাটে মেলে ধানের চারা


মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া , : 10-09-2024

যে হাটে মেলে ধানের চারা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি আমন মৌসুমে ধানের চারা বিক্রির হাট জমে উঠেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার সদর উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে নন্দনপুর এলাকার বৃহৎ হাটটিতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের ধানের চারা ক্রয়-বিক্রয় করছেন। চারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুখরিত থাকে এই হাট।

সদর উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে নন্দনপুর এলাকার মৌসুমি চারার হাটটি বেশ পুরাতন। আমন মৌসুমে এই চারার হাট ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় বেশ জমজমাট। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে তাদের পছন্দ মতো চারা দেখে দাম বলছেন। বিক্রেতারাও তাদের চারা প্রকারভেদ অনুযায়ী দাম হাঁকছেন। এই হাটে চারা আঁটি হিসেবে বিক্রি করা হয়। ছোট চারার আঁটি প্রকারভেদে ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা এবং বড় চারার আঁটি ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। 

ক্রেতারা তাদের পছন্দ মতো চারা কিনে পছন্দমতো বাহনে করে নিয়ে যাচ্ছেন। এই চারার হাটে বিভিন্ন জাতের ধানের চারা বিক্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে বিআর-২২, খাসা, নাজির, ও বিনা ধান-৭ অন্যতম। জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা কৃষক পাইকাররা এই ধানের চারা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।বাজারে আসা ক্রেতারা জানান এই হাটে চাহিদা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত চারা পেয়ে বেশ খুশি। দাম নিয়েও সন্তুষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতারা। অন্যদিকে, বিক্রেতারা বলছেন বিক্রিও ভালো হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে যদি এমন ভাবে চারা বিক্রি হয় তাহলে তারা লাভবান হবেন।

সদর উপজেলার বিরাসার থেকে চারা কিনতে আসা ক্রেতা রহমত মিয়া বলেন, প্রতি বছরই এই হাট থেকে ধানের চারা (জালা) কিনে থাকি। বিআর-২২ জাতের ২০ মোটা চারা ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। ১ কানি (৩০ শতাংশ ১ কানি) থেকে একটু বেশি জমিতে এই চারাগুলো বপন করতে পারব। গত বছর থেকে এবার দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই বাজারের চারার মান অনেক ভালো। চারা ভালো হলে ধানের উৎপাদন ও ভালো হয়।

জেলার নবীনগর উপজেলার রসুলপুর গ্রাম থেকে চারা কিনতে আসা শামসু মিয়া বলেন, আমন মৌসুমে এই অস্থায়ী চারার হাটটি জমে। আশপাশের বিক্রেতারা এখানে চারা বিক্রি করে থাকেন। তার ৬ কানি জমির জন্য একান থেকে চারা কিনবেন। ২৮ মোটা বিআর-২২ জাতের চারা ২৮২০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। দেড় কানির মতো জমিতে এই চারা রোপণ করা যাবে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই নিজের পছন্দ মতো চারা কিনতে পেরে খুশি।

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এলাকা থেকে চারা কিনতে আসা শ্রাবণ চৌধুরী বলেন, আমি দুই কানি জমির জন্য চারা কিনবো। চারা বিক্রেতারা প্রভারভেদ অনুযায়ী চারার দাম চাচ্ছেন। চারার দাম মোটামুটি, আমাদের নাগালেই মধ্যেই। চারার আঁটি প্রকারভেদে ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা এবং বড় চারার আঁটি প্রকারভেদে ২০০-২৫০ টাকা দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। এই চারার হাটে কোনো দালালচক্র নেই। মহাসড়কের পাশে বাজার হওয়ায় যানবাহন খুব সহজে পাওয়া যায়।

হাটে চারা বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার চান্দিয়ারা গ্রামের খুরশেদ ইসলাম বলেন, ‘এবার ২ কানি জমিতে ধানের চারা চাষ করেছি। চারা ভালোই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি প্রকার ভেদে ৮০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এই হাটে বিআর-২২, খাসা, বিনা ধান-৭সহ বিভিন্ন জাতের ধানের চারা বিক্রি হয়। বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে এমন বিক্রি হলে ভালো লাভবান হবো। তিনি আরও বলেন, এই হাটে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকসহ পার্শ্ববর্তী জেলার কৃষকেরা চারা কিনতে আসেন।

আরেক বিক্রেতা সদর উপজেলার সুহিলপুরের কঞ্চন দাস বলেন, আমন মৌসুমে এই অস্থায়ী হাটটি বেশ জমজমাট থাকে। এই হাটে যে কেউ চারা বিক্রি করতে পারে। চারার হাটটি কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে হওয়ায় ক্রেতা সহজে চারা কিনে পছন্দ মত বাহনে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি আরও বলেন,  আমি দেড় কানি জমিতে চারা রোপণ করেছি। দেড় কানি জমিতে তার চারা রোপণ করতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।  জমিতেই ৪৫ হাজার টাকা পাইকারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। এই চারার হাটে প্রকারভেদ অনুযায়ী চারার আঁটি বিক্রি হয়। এবারও চারার ক্রেতার সমাগম অনেক ভালো।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন জানান, নন্দনপুর চারার হাটটি অনেক পুরাতন। নন্দনপুরের চারার হাট প্রতিদিন বসে। এই হাটে মানসম্মত চারা পাওয়া যায়। এই চারার চাহিদা রয়েছে জেলার বাইরে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ ও নরসিংদীর কৃষকদের কাছে। 

মুনসী তোফায়েল আরও বলেন, সম্প্রীতি ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার কসবা, আখাউড়ায় ও বিজয়নগরে বন্যায় চারা ক্ষেতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত  কৃষকদেরকে নন্দনপুর হাট থেকে চারা ক্রয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নন্দনপুরে যারা চারা বিক্রি করে সে সকল কৃষকের মোবাইল নম্বর, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে কোন কৃষকের চারা পেতে অসুবিধা না হয়। বন্যার কারণে যাতে কোন জমি খালি না থাকে, যাতে কেউ চারা সংকটে না পড়ে। এই বাজারে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার চারা বিক্রি হয়ে থাকে। এই বছর প্রায় ২ কোটি টাকার চারা বিক্রি হবে বলে আশা করি। তিনি আরও বলেন, জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমিতে ধানের চারা বীজতলা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১৩২ হেক্টর জমিতে। বন্যায় ৩৭৪ হেক্টর জমির চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার বলেন, কৃষকেরা নিজের জমির পাশাপাশি বাজারে বিক্রির জন্য অতিরিক্ত কিছু চারা রোপণ করেন। এবার আমাদের রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার ৬০০ হেক্টর। বন্যায় প্রায় ৬ হাজার ৯৭৬ হেক্টর জমির চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি রোপা আমন মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যাসোসিয়েটস (সি-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭১৫১১৯৪৪৪,
ইমেইল: dhakabusines@gmail.com