আখাউড়ায় বেড়েছে রপ্তানি, কমেছে আমদানি


মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া , : 16-07-2024

আখাউড়ায় বেড়েছে রপ্তানি, কমেছে আমদানি

ইতিবাচক ধারায় ফিরছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের পণ্য রপ্তানি। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) ৫১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা রপ্তানি আয় বেড়েছে। এছাড়া বেড়েছে রাজস্ব আয়ও। তবে ডলার সংকটসহ নানা কারণে পণ্য আমদানি কমেছে বেড়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ স্থলবন্দর দিয়ে। যদিও, চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর তাগিদ সংশ্লিষ্টদের। এজন্য ভারতে নতুন নতুন পণ্যের বাজার তৈরির চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে প্রথম আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বাণিজ্য বাড়তে থাকায় ২০১০ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই স্থলবন্দর। শুরু থেকেই রপ্তানিমুখী স্থলবন্দরটি। বর্তমানে প্রতিদিন হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, ভোজ্য তেল, তুলা, ফার্নিচার ও খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। সেখান থেকে রপ্তানি পণ্য সরবরাহ হয় ত্রিপুরার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে।

বর্তমানে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে হিমায়িত মাছ ও সিমেন্ট। প্রতিদিন অন্তত ৪০-৫০ মেট্রিক টন পাঙ্গাস, পাবদা ও কাতলসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং প্রায় ৭০ মেট্রিক টন সিমেন্ট রপ্তানি হয় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। প্রতি মেট্রিক টন মাছের রপ্তানি মূল্য ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। আর প্রতি মেট্রিক টন সিমেন্ট রপ্তানি হয় ৮৬ ডলারে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয় ত্রিপুরায়।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, বিদায়ী (২০২৩-২৪) অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য। এর বিপরীতে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৭ কোটি ৫ হাজার ২০৩ টাকার পাথর, পেঁয়াজ, আদা ও জিরা। এ থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পেয়েছে ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৬ টাকা। মূলত পাথর আমদানিতে শুল্ক বেশি হওয়ায় রজস্বের পরিমাণ বেড়েছে। আর বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য। ওই অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল প্রায় ৬৬ কোটি টাকার পণ্য। এ থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পায় মাত্র ৫৬ লাখ টাকার মতো।

তবে বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব বাড়লেও নানা সংকটে আমদানি কমেছে। চাহিদা মতো সব পণ্য আমদানির অনুমতি না থাকা এবং ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় আমদানি কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যখন যে পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে, তখন সেই পণ্য আমদানির সুবিধার্থে স্থলবন্দর দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি চান তারা।

আখাউড়া স্থলবন্দরের কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাসিবুল হাসান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ডলার সংকট চলছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির জন্য চাহিদামতো এলসি খুলতে পারেননি। এছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আনার অনুমতি রয়েছে, আমাদের অঞ্চলে তার অধিকাংশেরই  চাহিদা নেই। ফলে এগুলো আমদানি করে মুনাফা করা যায় না’।

হাসান আরও বলেন, ‘ভারতীয় প্রসাধনী এবং কাপড়ের ভালো বাজার আছে আমাদের এখানে। কিন্তু আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে এ দুটি পণ্য আনার অনুমতি দিচ্ছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এছাড়া চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমরা রপ্তানি বাণিজ্যে বেশি জোর দিচ্ছি। ভারতে নতুন নতুন বাংলাদেশি পণ্যের রাজার তৈরির জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ 

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘ডলার আয়ের লক্ষ্যে বর্তমানে আমদানির চেয়ে রপ্তানিবাণিজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে রপ্তানি পণ্যবোঝাই গাড়িগুলো দ্রুত ছাড়করণসহ ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকে শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ।’তিনি আরও বলেন, ‘আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষা থাকে, যেগুলো ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে করে আনতে কিছুটা সময় লাগে। এসব পরীক্ষা-নীরিক্ষার ব্যবস্থা আখাউড়ায় না থাকলে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’ তাই এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে সব পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়াটা বাস্তবসম্মত হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

/ঢাকা বিজনেস/

 


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যাসোসিয়েটস (সি-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭১৫১১৯৪৪৪,
ইমেইল: [email protected]