বানে ভাসছে সুনামগঞ্জ, বাড়ছে দুর্ভোগ


তানভীর আহমেদ, সুনামগঞ্জ , : 02-07-2024

বানে ভাসছে সুনামগঞ্জ, বাড়ছে দুর্ভোগ

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারীবর্ষণে সুনামগঞ্জে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। গেলো কয়েক দিন আগে সৃষ্ট প্রথম দফায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে বন্যার কবলে পড়ে দিশেহারায় বানভাসি মানুষজন।

গতকাল সোমবার (১ জুলাই) বিকেল থেকে শুরু হওয়া ভারীবর্ষণ ও উজানের ঢলে সুরমা, চলতি যাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই, পাটলাই, পিয়াইন, কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি বেড়ে তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা ও আনোয়ারপুর অংশ তলিয়ে যাওয়ায় তাহিরপুরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সুরমা নদীর পানি উপচে এই সড়কের লালপুর এলাকা নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া যাদুকাটা নদীর পানি বেড়ে লাউড়েরগড় সড়ক ও রক্তি নদীর পানি বেড়ে তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রক্তি নদীর পানি বেড়ে সাচনা-সুনামগঞ্জ সড়ক নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা বড়ছড়া চারাগাঁও বাগলী রজনীলাইন লাকমাছড়া, লালঘাট ছড়া দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে ইতিমধ্যে, তাহিরপুর উপজেলার মধ্য তাহিরপুর, রতনশ্রী, খলাহাটি, ভাটি তাহিরপুর, শ্রীপুর, উমেদপুর, সুলেমানপুর বাজার ও গ্রাম, আনন্দনগর, পাটাবুকা, লামাগাওসহ বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঐ অঞ্চলের মানুষজন।

এদিকে, সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ির ঘাট, তেঘরিয়া, নবীনগর, ষোলঘর, উকিলপাড়া, মল্লিকপুর, বড়পাড়া, পশ্চিম নতুনপাড়া, পূর্ব নুতানপাড়া, শান্তিবাগ, পাঠানবাড়ি, হাছনবসত, কালীপুর, হাছনবাহার এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর, চানপুর, কেজাউড়া, গুজাউড়া, দরিয়াবাজ, আব্দুল্লাহপুর, ইছাঘড়ি, লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের ইসলামপুর, গোয়াচুড়া, বাহাদুরপুর, নীলপুর, গোবিনপুর, নোয়াগাঁওসহ ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল দ্বিতীয় বারের মতো প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া মহাশিং আক্তাপাড়া, নলজুর জগন্নাথপুর, পাটলাই, সোলেমানপুর, ঝালোখালী, মুসলিমপুর, সুরমা, ছাতক ও যাদুকাটা শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে পানি বেড়েছে। যাদুকাটা শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে পানি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়বে। আগামী দুদিন পানি বাড়তে পারে। মেঘালয়ে এখনো প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের সেই পানি সিলেটের পানির সঙ্গে মিশে সুরমা নদী দিয়ে মেঘনায় পতিত হয়। সেসব পানি সুনামগঞ্জের নদীতে পড়ে বন্যা দেখা দেয়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনো খাবার, নগদ টাকা ও জিআর চাল মজুত রয়েছে। বন্যাকবলিত লোকজনকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির দিকে বিশেষ নজর রাখছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যাসোসিয়েটস (সি-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭১৫১১৯৪৪৪,
ইমেইল: [email protected]