জাকির হোসেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেরা সবজি চাষি। দেশের সবচেয়ে বড় টমেটো বাগান তার। যেখানে দিনে বিক্রি হয় দেড় লাখ টাকার টমেটো। কিন্তু ঋণভারে জর্জরিত এই চাষির মুখে হাসি নেই। ফলনের লাভ নিয়ে যাচ্ছে অর্থ বিনিয়োগকারী বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। জেলা সদরের মজলিশপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ৭০ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন জাকির।প্রতিদিন বাজারজাত করছেন অন্তত ১০০ মণ টমেটো। যার বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকারও বেশি।
জানা যায়, পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে ২০০৪ সালে সৌদি আরব পাড়ি জমান জাকির হোসেন। কয়েক বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে শুরু করেন কৃষি কাজ। ২০১৩ সালে সদর উপজেলার মৈন্দ গ্রামে ১ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন তার স্বপ্নের প্রবাস স্মৃতি অ্যাগ্রো ফার্ম। এরপর ধীরে ধীরে আকার বাড়তে থাকে তার সবজি ব্যবসার। কৃষি ক্ষেত্রের এই আদর্শ কৃষক এখন লিজ নেওয়া ১৩০ বিঘা জমিতে টমেটো, মিষ্টি কুমড়া ও বেগুন চাষ করছেন।
জাকির বলেন, ৭০ বিঘায় চাষ করছি বিভিন্ন জাতের টমেটো। অ্যাগ্রো ফার্মে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৫০ জন নারী-পুরুষের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেট ও চট্টগ্রামে বাজারজাত করছি টমেটো। এ ছাড়াও তরমুজ, শসা, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, লাউ চাষ করছি। গত বছরে টানা বৃষ্টি ও ভারী বর্ষণে সৃষ্ট আগাম বন্যায় সবজি বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। নষ্ট হয়ে যায় শত বিঘা জমিতে চাষ করা প্রায় ১ কোটি টাকার শসা ও টমেটো। এতে চরম বিপাকে পড়েছিলাম।
তিনি বলেন, এ বছর চাষের জন্যও নতুন করে ঋণ নিতে হয়েছে। বর্তমানে ২ কোটি টাকা ঋণ আমার। এরমধ্যে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছে কৃষি ব্যাংক। বাকি টাকার পুরোটাই বিভিন্ন এনজিও’র কাছ থেকে চড়া সুদে নেওয়া। প্রতি মাসে ৪/৫ লাখ টাকা সুদ দিতে হয়। ফলে নিজের কষ্ট, শ্রম-ঘামের কোনো মূল্যই পাচ্ছি না।
জাকির বলেন, সহজ শর্তে ঋণ পেলে এবং এনজিও’র চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারলে সবজি চাষে আরও বড় সাফল্য দেখাতে সক্ষম হবো। শুধু তাই নয়, এই কাজে হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবো। বর্তমানে আমার সবজি চাষে ১৫০ জন নারী-পুরুষ নিয়োজিত। এক বছর সময় পেলে বর্তমান ঋণ পরিশোধ করতে পারবো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, চাষিরা যেন সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ পান, সেজন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর জেলার ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে টমেটোর আবাদ হয়েছে ৭৪০ হেক্টর জমিতে। আশা করা হচ্ছে ২৫ হাজার ৯০০ টন টমেটো উৎপাদন হবে। বাজারমূল্য ১৫৫ কোটি টাকার বেশি প্রত্যামা করা হচ্ছে।
ঢাকা বিজনেস/এম