প্রতিবছর অনেক মানুষ হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়ে থাকেন। এবারও হজ পালনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো। হজ পালনকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডায়াবেটিস রোগী থাকেন। হজে গিয়ে এই রোগীদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। সম্প্রতি দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ডায়াবেটিস রোগীদের হজ পালনের পূরের্ব প্রস্তুতির ব্যাপারে কথা বলেছেন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযাগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম।
এ চিকিৎসক ডায়াবেটিস রোগীদের হজ পালনে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে কিছু পরামর্শ জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে, হজে গিয়ে রক্তের শর্করা অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। হজে যাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক করে নেবেন।
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ও প্রস্রাবে কিটোন বডি নির্ধারণের জন্য গ্লুকোমিটার ও ডিপস্টিক ব্যবহার সম্পর্কে আগেই জেনে নিন এবং সঙ্গে রাখুন। আর ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ যদি ভালো থাকে তাহলে হজযাত্রায় ইনসুলিনের ডোজ ১০ থেকে ২০ শতাংশ বা কিছুটা কমানোর পরামর্শ দেয়া হয়। আবার মুখে খাওয়ার সালফোনাইলুরিয়ার ওষুধ ইনসুলিনের মতো হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। ফলে প্রয়োজন মনে করলে এর মাত্রা চিকিৎসক এর মাধ্য কিছুটা কমাতে পারেন। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য সাধারণ ইনসুলিনের পরিবর্তে অ্যানালগ ইনসুলিন ব্যবহারের জন্যও পরামর্শ দেয়া হয় রোগীদের।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা: নিয়ম মেনে তিন বেলা খাবার গ্রহণের পাশাপাশি খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে স্ন্যাকস করতে হবে। সঙ্গে বাদাম, ফল, মুড়ি ইত্যাদি রাখতে পারেন। প্রতিদিন দু-একটি করে খেজুর খাওয়া যাবে। তাওয়াফের আগপর্যন্ত জটিল শর্করা যেমন ভাত, রুটি বা ওটস এবং খেজুর খাওয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়। আর হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গ বোধ করলে খেজুর বা চকলটও খেতে পারেন।
পায়ের যত্নে করণীয়: হাঁটার সময় পায়ের ফাটল রোধে দিনে দুইবার করে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। প্রতিদিন ভালো করে দেখুন পায়ে কোনো কাটা বা ইনজুরি আছে কিনা। থাকলে ব্যবস্থা নিন। পবিত্র জায়গাগুলোর দূরত্ব যদি ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে না হয়, তাহলে না হাঁটাই ভালো। মসজিদের মধ্যে জুতানিষিদ্ধ, এমন এলাকায় পা ভালো রাখতে প্যাডেড মোজা পরুন। পা শুকনা রাখার জন্য অজুর পর তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে নিন। আর পায়ে যদি কোনো প্রদাহ, ফোসকা ও সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে প্রোফাইল্যাকটিক অ্যান্টিবায়োটিক সঙ্গে রাখুন।
পানিশূন্যতা রোধে করণীয়: সবসময় সঙ্গে পানি রাখুন। কিডনি রোগীরা দিনে কী পরিমাণ পানি পান করবেন, সেটি চিকিৎসকের পরামর্শে জেনে নিন।
অসুস্থ হলে কী করবেন: অবশ্যই ইনসুলিন নেয়া বা ওষুধ সেবন করতে হবে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কেমন আছে, তা ঘন ঘন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। মাত্রাগুলো ১৫ মিলিমোল/লিটারের বেশি থাকলে প্রস্রাবের কিটোন পরীক্ষা করাতে হবে। যদি কখনো কোনো ধরনের অসুস্থতা দেখা দেয়, সংক্রমণ, বমি বা ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, স্যালাইন এমন পানীয় পান করতে হবে, তবে মিষ্টিজাতীয় পানীয় নয়। আর ঘন ঘন খাবার খেতে হবে। অসুস্থতা যদি বেশি হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে।