১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়, বিপাকে নিম্ন-আয়ের মানুষ

কামরুজ্জামান শাহীন || ১৪ জানুয়ারী, ২০২৪, ০১:৩১ পিএম
হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়, বিপাকে নিম্ন-আয়ের মানুষ


শৈত্যপ্রবাহে স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। নিতান্তই জরুরি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। নিম্নবিত্তের মানুষেরা বলছেন,  তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে ভোগান্তি বেড়েছে তাদের। হাড়কাঁপানো শীত আর ঘনকুয়াশার কারণে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।  আর চিকিৎসকরা বলছেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগ বেড়েছে ব্যাপকহারে। শীতের দাপটে বেশি কাবু হচ্ছে শিশু। সঙ্গে বয়স্করাও। হাসপাতালগুলোতে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগীর ভিড় বেড়েই চলেছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সূত্রমতে, গত বছর মধ্য নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। মারা যান অন্তত ৮০ জন। আবহাওয়া পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজধানীর আগারগাওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটের ওয়ার্ডগুলোতেও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি জানুয়ারি মাসের এই ১৪ দিনে ১৯০ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। এর অধিকাংশ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত  হয়ে ভর্তি হয়েছে।

হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটির রেসপিরেটরি মেডিসিন ডিপার্মেন্টের এসিসটান্ট প্রফেসর ডা. কামরুজ্জামান বলেন, তীব্র শীতের কারণে আক্রান্ত শিশুরোগীর সংখ্যা এখানে বেড়েছে। এর মধ্যে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, টনসিলাইটিস, ফেরেনজাইটিস, রাইনাইটিস রোগে আক্রান্ত বেশি। রোগীর চাপ বেশি হলেও আমরা সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ শীতকালে বিশেষ করে এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শিশুদের প্রতি বিশেষ দায়িত্বশীলতার ওপর জোর দেন ডা. কামরুজ্জামান। 

চিকিৎসায় সংশ্লিষ্টরা জানান, এই অস্বাভাবিক অবস্থায় শিশুদের নিরাপদ পানি, নিরাপদ খাবার সরবরাহ করার পাশাপাশি ঠাণ্ডা থেকে যথাসম্ভব সুরক্ষিত রাখা খুব জরুরি। শিশুদের গরম কাপড়ের পাশাপাশি সথাসম্ভব হাতমোজা ও মোজা পরিয়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘যাদের অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে, এই শীতে তাদের খুব সাবধানে চলাচল করা প্রয়োজন। এই সময় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকায় সমস্যাগুলো প্রকট হয়। বিশেষ করে অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যায় শীতে।’

ডা. সাজ্জাদ আরও বলেন, ‘তীব্র ঠাণ্ডায় অনেক সময় তখন বয়স্কদেরও পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। তাই শিশু কিংবা বয়স্ক সবার জন্য খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক  থাকতে হবে।’

এদিকে, খেটেখাওয়া দিনমজুর মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। আব্দুল্লাহপুর ও উত্তরার কয়েকটি স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে বসে থাকা দিনমজুর মানুষ স্বাভাবিক দিনের মতো কাজজের ডাক পাচ্ছেন না তারা। বিভিন্ন নির্মানকাজের জন্য মানুষ শ্রমিক ভাড়া করে থাকেন এসব ‘শ্রমিকহাট’ থেকে। কিন্তু তীব্রশীত আর মৃদু হাওয়ার ফলে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় অনেক নির্মাণ সাইটেও কাজ কমে গেছে। ফলে কাজ পাচ্ছেন না অনেকেই। হাসমত আলী নামের একজন শ্রমিক কোদাল হাতে বসে আছেন আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকে। কিন্তু বেলা ১১টাও তার কাজ মেলেনি। তার ভাষ্য অনেকেই কাজ না পেয়ে ফিরে গেছেন ঘরে।

পশ্চিম আব্দুল্লাপুরের একটি বস্তিতে থাকেন রিকশা চালক আজিবর। তিনি বলেন, ঠাণ্ডায় পর্যাপ্ত যাত্রী মিলছে না। দুপুর পর্যন্ত কামাই হয়েছে ৯০ টাকা মাত্র। রিকশার জমার টাকা কামাতে পারবো কিনা, তাই নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই।’

আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী শীতের এই তীব্রতা থাকবে আরও কয়েকদিন। শীতের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত জনজীবনে যে স্থবিরতা নেমে এসেছে, তা স্বাভাবিক হবে না। 

ভ্যান গাড়িতে সবজি বিক্রেতা সোহাগ বলেন,‘ঠাণ্ডার কারণে মানুষ ঘর থেকে বের কম হচ্ছে। নিতান্ত ঠেকে না গেলে বের হচ্ছে না মানুষ। বেচাবিক্রি কম। এই পরিস্থিতিতে সংসারের নিয়মিত ব্যায়ভার বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

/ঢাকা বিজনেস/এনই/ 



আরো পড়ুন