২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বাগেরহাটে গাছে-গাছে মরুভূমির খেজুর নাচে (ভিডিও)

জামাল হোসেন বাপ্পা, বাগেরহাট || ০৭ জুলাই, ২০২৩, ০১:০৭ পিএম
বাগেরহাটে গাছে-গাছে মরুভূমির খেজুর নাচে (ভিডিও)


বাগেরহাটে গাছে গাছে হাওয়ার তালে তালে নাচছে মরুভূমির ফল খেজুর। এর মধ্যে রয়েছে আজওয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বারের মতো বিভিন্ন প্রজাতির খেজুর। থোকায় থোকায় ঝুলতে থাকা এসব খেজুরের কোনোটি লাল, কোনটির রঙ হলুদ। আকার ভেদে কোনোটি গোল, কোনোটি আবার লম্বা। রসালো মিষ্টি এই খেজুর বাগান গড়ে তুলেছেন বাগেরহাট জজ কোর্টের আইনজীবী মো. জাকির হোসেন। 

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সন্ন্যাসী হাজিপাড়া গ্রামে নিজের ১৫ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা এই বাগানে রয়েছে ৫ শতাধিক খেজুর গাছ। এই বছর ফল ধরেছে ৮০ গাছে।  ৩ বছর আগে রোপণ করা গাছগুলোর একেকটিতে ফল ধরেছে ২৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত।

অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন বলেন, ‘‘২০১৪ সালে ১৫ বিঘা জমিতে নয়টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করি। ওই সময় পুকুরের চারপাশজুড়ে বিভিন্ন ফলদ গাছও রোপণ করি। কিন্তু লবণ পানির জন্য এসব গাছে ঠিকমতো ফল হচ্ছিল না। এ সময় প্রচণ্ড লবণাক্ততরা কারণে পুকুরে মাছ চাষ ভালো হচ্ছিল না। তাই ২০১৯ সালের প্রথম দিকে ‘রামপাল সৌদি খেজুর বাগান’নামে এই খেজুর চাষ শুরু করি।’’


জাকির হোসেন ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ২০০ সৌদি খেজুরের চারা এনেও রোপণ  করেছেন। পরবর্তী  সময়ে নরসিংদী থেকে আরও ১০০ চারা এনেছেন। বর্তমানে এই বাগানে আজওয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারোহি; এই পাঁচ প্রজাতির ৫ শতাধিক গাছ রয়েছে। এর আগে গত বছর প্রায় ৫০ গাছে ফল ধরেছিল। এ বছর ৮০ গাছে একযোগে ফল এসেছে। 

আগামী বছর প্রায় ৩০০ গাছে ফল আসবে বলে আশা করছেন জাকির হোসেন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ফল ব্যবসায়ী তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও জানান তিনি। গত বছর যে ফল ধরেছিল, সেগুলো স্থানীয় বাসিন্দাসহ বাগান দেখতে আশা মানুষের মাঝে বিতরণ করেন এই বাগান মালিক। 

জাকির হোসেন বলেন, ‘এই বছর প্রথম বাণিজ্যিকভাবে খেজুর বিক্রি শুরু করেছি। এছাড়া আমার বাগানে খেজুরের পাশাপাশি কয়েক প্রজাতির আম, আমড়া, মাল্টাসহ অন্যান্য ফলের গাছও রয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাগানে কলম (অপশুট)-এর চারা রয়েছে। কারও লাগলে দিতে পারবো। তবে সে ক্ষেত্রে দামটা একটু বেশি পড়বে। কারণ আমার বাগানের গাছগুলো উন্নত জাতের। আমিও অনেক বেশি টাকা ব্যয় করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাছগুলো সংগ্রহ করেছি।’ 


বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত আশরাফ শেখ বলেন, ‘আমাদের এখানে পানিতে প্রচণ্ড লবণ। এ কারণে গাছপালাও ঠিকমতো হতে চায় না। তবে আমরা গভীল নলকূপ থেকে মিষ্টি পানি তুলে গাছে দেই। এছাড়া, প্রতিটি গাছে বিশেষ যত্ন নিতে হয়।’

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের রামপাল উপজেলায় অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন সৌদির খেজুর চাষে সফল হয়েছেন। আমরা কৃষিবিভাগ তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে  যাচ্ছি। বিশেষ করে যখন ফল ধরে, তখন ফল যেন ঝরে না পড়ে,  সে বিষয়ে পরামর্শ দেই।’

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বিভিন্ন পোকামাকড়রে আক্রমণ ও রোগবালাইয়ের আক্রমণে কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, এ বিষয়েও চাষির সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। শুধু তাই নয় জাকির হোসেনের দেখাদেখি যে সব কৃষক আগ্রহী হয়েছেন খেজুর চাষে, তাদেরও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সৌদি খেজুরের একটা সমস্যা হচ্ছে, পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদা হয়। এ কারণে বীজ থেকে যে গাছগুলো তৈরি করা হয়, তার অধিকাংশই ফল নাও ধরতে পারে। মূলত সাকারের মাধ্যমে এখান থেকে চারা সংগ্রহ করা হচ্ছে।  এই খেজুরের চাষ যদি বাণিজ্যিকভাবে করা যায়, তাহলে নতুন অর্থকরী ফসল হিসেবে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/

   










আরো পড়ুন