২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



লিটনের সেঞ্চুরি, ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সমানে লড়াই

ঢাকা বিজনেস স্পোর্টস ডেস্ক || ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৬:৩৯ পিএম
লিটনের সেঞ্চুরি, ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সমানে লড়াই


টেস্ট ক্রিকেটের মহিমা এখানেই। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে যে বাংলাদেশ চাপা পড়েছিল ধবংসস্তূপে, বিকেলে সেই বাংলাদেশ লড়াই করছে সমান সমান। মৃত্যুকূপ থেকে বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন লিটন দাস। করেছেন অনবদ্য ১৩৮ রান। তিনি প্রমান করলেন, ‘ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট’। লিটনের সঙ্গে ছিলেন আরেক অলরাইন্ডার সারথী মেহেদী হাসান মিরাজ; তিনি করেছেন ৭৮ রান। 

প্রথম ইনিংসে ২৬২ রানে অল আউট হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিক পাকিস্তানের চেয়ে ১২ রান পিছিয়ে থেকে শেষ হলো টাইগারদের ইনিংস। ২৬ রানে বাংলাদেশের ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ২৬২ পর্যন্ত টিকে থাকা এক অবিসংবাদিত যুদ্ধই বলা চলে। সেই যুদ্ধে আপাত সফল বাংলাদেশের টেল এন্ডাররা। 

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৯ রান তুলেছে পাকিস্তান। ৩.৪ ওভারে ওই রান তুলে তারা। তবে টিম টাইগার এই ৯ রানের মধ্যেই ফেলে দিয়েছে পাকিদের ২ উইকেট। দিন শেষে পাকিস্তান ২১ রান এগিয়ে থাকলেও ২ উইকেট নিয়ে সমীকরণ একই রেখায় নামিয়ে রেখেছেন টাইগার বোলাররা। প্রথম ইনিংসে যে হাসান মাহমুদ ছিলেন উইকেটশূন্য, দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১০ বলে ৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। 

পাকিস্তানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আব্দুল্লাহ শফিককে আউট করেছেন ৩ রানে। আর খুররম শাহজাদকে কোনো রান নেয়ার সুযোগই দেননি। 

এখন আর মাত্র ৮ উইকেট নিতে পারলেই দেখা যাবে বাংলাদেশের জয়ের চাঁদ কত দূরে। যত তাড়াতিাড়ি সম্ভব, যত কম রানে ৮ উইকেট নেওয়া যায় ততই মঙ্গল। পাকিদের অল্প রানের মধ্যে আটকে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছাই এখন বাংলাদেশের উদ্দেশ্য। 

যেখানে পিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরি পায়নি পাকিস্তান। সেখানে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে বসলেন টাইগার ব্যাটার লিটন দাস। বাউন্ডারি মেরে ১৭১ বলে ১০৩ রান করেন লিটন। ২২৮ বল খেলে ১৩৮ রান করে দলকে শক্ত জায়গায় রেখে ফেরেন তিনি। এর আগে গুরুত্বপূর্ন ৭৮ রান করেন অল রাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। এই জুটিই বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রেখেছেন। 

এর আগে রবিবার সকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপর একটা ভূমিকম্প হয়ে যায়। তাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল দলের টপ অর্ডার। দলীয় রান ১৪ থেকে ২৬। এই ১২ রানের মধ্যেই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়লো একে একে ছয় ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা ছিল টাইগারদের জন্য ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা। 

যদিও ধ্বংসস্তূপ থেকে দলকে টেনে তুলছেন দুই টেল এন্ডার- মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাস। তাতে যেমন ফলো অন এড়ানো গেছে, তেমনি প্রথম ইনিংসে দুই দলের ব্যবধান কমেছে। 

শনিবার ২৭৪ রানে পাকিস্তানকে অল আউট করে শেষ বেলায় ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। করেছিল বিনা উইকেটে ১০ রান। ৬ষ্ঠ ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৪ রানে ফিরে যান জাকির হাসান। এ উদ্বোধনী ব্যাটার ১৬ বলে করতে পেরেছেন ১ রান। আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার সাদমান ফিরে যান দলীয় ১৯ রানে। তার সংগ্রহ ১০। দলীয় ২০ রানে আউট হন অধিনায়ক শান্ত, করেছেন ৪ রান। ওই ২০ রানের মাথায়ই ব্যক্তিগত ১ রান করে ফেরেন মুমিনুল। এরপর মুশফিক এবং সাকিব দুজনেই সাজঘরে ফেরেন দলীয় ২৬ রানের মাথায়। তাদের সংগ্রহ যথাক্রমে ৩ এবং ২।

লিটন এবং মিরাজ দুজনেই দেখে শুনে খেলে দলকে টেনে তুলছিলেন। তারা দুজনে লাঞ্চে যান দলকে ৭৫ রানে রেখে।   তবে প্রথম দিনটি কিন্তু খুবই ভালো গিয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। 

রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে স্বাগতিকদের ১০ উইকেটে হারানোর পর হাওয়ায় উড়ছিল টিম টাইগার। বলা চলে প্রথম টেস্টের চেয়েও সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল দ্বিতীয় টেস্টের শুরুর দিনে। প্রথম দিনে ২৭৪ রানে পাকিস্তানকে অল আউট করে দিয়েছিল। জ্বলে উঠেছিলেন টাইগার বোলাররা। ৫ উইকেট পেয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কম যাননি তাসকিনও। তিনিও ছিলেন দুর্দান্ত, পেয়েছেন ৩ উইকেট। নাহিদ রানা এবং সাকিব আল হাসান পেয়েছেন একটি করে উইকেট। উইকেশূন্য থেকেছেন কেবল হাসান মাহমুদ। 

এই টেস্টের সামনে আর মাত্র ২ দিন। শেষ দিনে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তবে পিচ দেখে মনে হচ্ছে ভিষণ স্পোর্টি। এখানে পেসাররা যেমন ভালো করছেন, তেমিন বাজিমাত করছেন স্পিনাররাও। আগামি ২ দিনের মধ্যে ফলাফল চলে আসতে পারে। সোমবারও হয়ে যেতে পারে ফয়সালা। 

আশার কথা হলো- এই টেস্ট ড্র হলেও সিরিজ বাংলাদেশে। টাইগার ভক্তদের প্রত্যাশা, আরেকটা জয় নিয়ে, ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরুক নতুন বাংলাদেশ!



আরো পড়ুন