২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার



অর্থনীতি
প্রিন্ট

ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে যে সিদ্ধান্ত নিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ৩১ আগস্ট, ২০২৪, ০৫:৩৮ এএম
ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে যে সিদ্ধান্ত নিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক


গত কয়েক মাস ধরেই বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এবার এ অস্থিরতায় লাগাম টানতে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  মূলত ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ায় ডলারের দাম কিছুটা কমানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমদানির দেনা পরিশোধ ও নতুন এলসি খোলায় ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২০ টাকা করে ডলার বিক্রি করতে পারবে। কোনো ব্যাংকই এর চেয়ে বেশি দাম রাখবে না। এসব খাতে বর্তমানে ব্যাংক ভেদে ১২০-১২৫ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে প্রতি ডলারের দাম। 

এ হিসাবে দাম সর্বোচ্চ স্তর থেকে ৫ টাকা কমবে, যা আমদানি ব্যয় কমাতে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। আমদানি পণ্যের দাম কমে গেলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপও কিছুটা কমে যাওয়ার কথা। 

তবে আগাম ডলার বেচাকেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুসরণ করবে। এ ক্ষেত্রে মেয়াদের ভিত্তিতে সুদ আরোপ করবে ব্যাংকগুলো। তবে নগদ ডলার বা ভ্রমণের ক্ষেত্রে ডলার ড্রাফট বিক্রিতে ব্যাংকগুলো প্রচলিত নীতিমালা অনুসরণ করবে।

গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলার বেচাকেনার সঙ্গে সম্পর্কিত কর্মকর্তা ও ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। 

বৈঠকটিতে বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) সদস্যভুক্ত প্রায় সব ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা হয়, ব্যাংকগুলোতে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। ডলার সংকট নিয়ে যেসব সংশয় ও শঙ্কা ছিল সেগুলোও বেশ খানিকটা কমেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ, বৈদেশিক অনুদান, রপ্তানি আয় দেশে আনার প্রবণতা বেড়েছে। 

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের খ্যাতি ব্যবহার করে বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক ঋণ প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক খাতে অনিশ্চয়তাও অনেকটা কমে গেছে। 

এসব কারণে ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা করে দাম রাখবে। কোনো ব্যাংকই এর বেশি দামে ডলার বিক্রি করবে না। যেসব ব্যাংক এখনও ১২০ টাকার বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে তারাও দাম ১২০ টাকার মধ্যে দ্রুতই নামিয়ে আনবে।

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন আইন অনুযায়ী, ডলার বেচাকেনার ক্ষেত্রে কোনো ক্রমেই লোকসান দিতে পারবে না কোনো ব্যাংক। কারণ এর আগে কয়েকটি ব্যাংক ডলার বেচাকেনায় বড় অঙ্কের লোকসান দেওয়ায় তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছিল। 

সে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিধান করেছে। এ অবস্থায় আন্তঃব্যাংক থেকে ১২০ টাকার কমে কিনলে তা গ্রাহকের কাছে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু এখন আন্তঃব্যাংকে ডলারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম ১২০ টাকায় স্থির হয়ে আছে। আলোচ্য সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হলে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ১০-২০ পয়সা বা তার বেশি কমাতে হবে।

বৈঠকে রেমিট্যান্সের ডলারও সর্বোচ্চ ১২০ টাকা করে কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে কোনো ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ১২০ টাকার বেশি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোকে অফার করবে না। 

বর্তমানে অনেক ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলার ১২২-১২৪ টাকা করেও কিনছে। ফলে কিছু ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলারের দাম কমাতে বাধ্য হবে। তখন রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে কি না সেদিকে নজর রাখতেও বলা হয়।



আরো পড়ুন