২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার



টাঙ্গাইলে ১০৮ গ্রামে ৪৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি

আব্দুল্লাহ আল নোমান, টাঙ্গাইল || ১০ জুলাই, ২০২৪, ০৬:৩৭ এএম
টাঙ্গাইলে ১০৮ গ্রামে ৪৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি


উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে টাঙ্গাইলে ৩ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে জেলার ৬ উপজেলায় ৪৮ হাজার মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে কয়েকটি উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, হাট-বাজার ও ফসলি জমি। পানিবন্দি বেশিরভাগ মানুষ একবেলা খেয়ে জীবনযাপন করছেন। এতে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে পানিবন্দি মানুষের জনজীবন। যদিও পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। 

সংশ্লিষ্ট ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সূত্র জানায়, যমুনা, ঝিনাই এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, সদর, বাসাইল এবং নাগরপুর উপজেলার  নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছেন। এসব উপজেলায় ২০টি ইউনিয়ন ১০৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ১১ হাজার পরিবার প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। 

স্থানীয়রা জানায়, এসব উপজেলায় বন্যা কবলিত হয়ে আউশ ধান, পাট, তিল ও নানা ধরনের সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। গবাদি পশুগুলো খাবার সংকটে ভুগছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির, ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চরাঞ্চলের অনেকে নৌকায় বা স্বজনদের বাড়ি ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়ে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন পানিবন্দি অনেক মানুষ। এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে দুর্গতরা অভিযোগ করেছেন। আবার কিছুকিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙনও। 

ভূঞাপুর উপজেলার নিকলাপাড়া গ্রামের গৃহিনী ডলি আক্তার বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছি। ঘরে আমাদের পানি উঠেছে। একদিকে নদী ভাঙনে আরেকদিকে আমরা পানিবন্দি অবস্থায় আছি। আমাদের চলাচলেরও সমস্যা হচ্ছে।’ 

গাবসারা ইউনিয়নের মেঘাপটল গ্রামের সাবের আলী শেখ বলেন, ‘বন্যায় আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা কোনো জায়গায় যেতে পারছি না। পানিতে ভাসতেছি আমরা। রান্না করে খেতে পারছি  না।’ 

একই গ্রামের ময়েদ আলী বলেন, ‘প্রায় দেড় মাস ধরে এ অবস্থায় আছি। এখন আমাদের নৌকা একমাত্র ভরসা। নৌকা থাকলে আমরা যাতায়াত করতে পারি, তাছাড়া আমারা কোথাও যেতে পারছি না। আমরা সরকারের পর্যাপ্ত সহযোগিতা কামনা করছি।’

ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাপলা বলেন, ‘প্রতিবছর বন্যার সময় আমাদের এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশেষ করে প্রতিবছরই যমুনা নদীর গর্ভে ৩-৪ গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। বন্যার পরে সরকারের কাছে স্থায়ী সমাধানের দাবি করছি।’ 

ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রশীদ বলেন, ‘উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা করা হচ্ছে।’ 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ‘পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য ৮০০ মেট্রিক ট্রন চাল ও ১৫ লাখ টাকা, শুকনা খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট বরাদ্দ পেয়েছি। প্রতিটি বন্যা কবলিত প্রতিটি উপজেলায় ২০ মেট্রিক ট্রন করে চাল ও জিআর ক্যাশ দেওয়া হয়েছে। বানভাসি মানুষের খবর পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই ত্রাণ সহায়তা করা হচ্ছে।’



আরো পড়ুন