আমি অর্ধনারীশ্বর


দিলারা হাফিজ , : 10-03-2024

আমি অর্ধনারীশ্বর

লোকে বলে,
আমি নারী, মানুষ তো নই, অর্ধেক মানব,
কেননা,আদমের বাম উনপাঁজর থেকে সৃষ্টি
বিবি হাওয়ার গর্ভজাত আমি এক কিংবদন্তী!
আমি নারী…যেন অর্ধেক মানব।

আমি কি বলি? শোন!

সৃষ্টিশীল মানুষ যে আমি, অর্ধেক যদিও নারী—
অবশিষ্ট বাকী—অর্ধেক—স্বয়ং ঈশ্বর
জ্ঞানবৃক্ষের ফলাহারী,লোকজ দর্শনে বিশ্বাসী 
আমি স্বর্গভ্রষ্ট এক অর্ধনারীশ্বর…

রূপসী চাঁদের মাটি ছেঁনে তিনি গড়েছেন আমাকে,
তিনভাগ জলের ঐশী ও ছলছল মমতায় গড়া
ঝিনুক লাবণ্যে আমি এক অধরা উপাখ্যান,
বেঁচে আছি আমি স্বয়ং—নিজমনে ও নির্জ্ঞানে..... 
আমার শরীরে স্বর্গের অবিনাশী এক বাজনা,
নিত্য বাজে সে বাদ্য—কোমল সুরের মাদলে।

আমার মধ্যেই বসত করে মানবাত্মার জ্যোৎস্না
নারী ও ঈশ্বর—-পরস্পর যেন রস-নিরঞ্জন!

এক জনমের সুপ্ত বাসনা থেকে উত্থিত এই  আমি
পরমাত্মা এক লায়লার সহোদর,মজনুর উন্মাদনা।
আমি ধ্যানী, ওলী ও কবি হযরত রাবেয়া বসরী,
যার একহাতে মশাল অন্যহাতে জলের কলস—-

আমি মহাকাব্য রামায়ণের অগ্নিশুদ্ধ জানকী,
সতীত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ লব ও কুশের জননী…

আমি শ্রীচৈতন্য-মহাপ্রভুর মহিয়সী বিষ্ণুপ্রিয়া—
সন্যাসী স্বামীর ভালোবাসায় প্রেমাশ্রুতা বিদুষী!

আমি দ্রৌপদী-কৃষ্ণা,দ্রুপদরাজের কন্যা পাঞ্চালী
অর্জুনের স্বয়ংবরসভার অর্চনায় বিজয়ী বরমাল্য…

আমি পদাবলির রাধিকা সুন্দরী,কৃষ্ণের বাঞ্ছিতা,
সদাই ধেয়ানে মেঘপানে চেয়ে কাটে বিরহ বেলা।
আমি বৈষ্ণব কবি বড়ু চণ্ডীদাসের প্রণোদনা!
ধোপাকন্যা রজকিনী রামী নামে চেনে যে সকলে।

তৈমুস বাদশাহের কন্যা জোলেখা আমি,আজিজপত্নী
ক্রীতদাস ইউসুফে প্রণয়াসক্ত,একদা হয়েছি দিওয়ানা।

দুষ্প্রাপ্য কখনো—আমি দেহহীন মায়ার ললাট
কখনো বা অধরা এক অমৃতকুম্ভের পুষ্পায়ণ
শ্যামল শস্যভারে তৃণখচিত মাটির উপাসনা আমি
রোদ-বৃষ্টি,শ্রাবণ-মেঘ,বিদ্যুৎফলায় যেন ধরিত্রীমাতা।

আমাকে নিয়েই আজো কাড়াকাড়ি,বাড়াবাড়ি 
বস্ত্রহরণে বাধে যুদ্ধ,দামামা বাজে —কুরুক্ষেত্রে।
তোমরা বলো,সৃষ্টি ও অনাসৃষ্টির কেন্দ্রভূমি আমি,
জানি, আভূমি আনত এই আমি ধরিত্রীর দুহিতা।

আমার জন্যে তবু পাল্টে যায় রণকৌশলবিধি
যেমন ছিল সে দূর অতীতে অনাথ ন্যায়নীতি 

এমন কি ক্ষণবাদী বর্তমানে, প্রযুক্তির এই ভবিষ্যতে 
কেউ যেন পেছনে টেনে রাখে অদৃশ্য এক গুপ্ত বন্ধনে—
কে যেন আমাকে নিমজ্জিত রাখে সপ্ত আসমানের 
লোভ ও লাভের অভূতপূর্ব বিষন্ন আয়াত পাঠে —

মানব মুক্তির দূরাগত বাসনায় নিরন্তর যারা ঢালে
কলির কালিমা…তারা তো শত্রু বৈ কেউ নয় আপন!
আমি এই শরীর থেকে সৃষ্টি করি রক্তবাহী এক নদী 
সূর্যরঙে আঁকি সমুজ্জ্বল নধর-শরীর এক সোনালু-পত্রে 

কখনো বা ভুলে-ভালে উভলিঙ্গ জন্ম হয় এই গর্ভে
অন্যমনস্কতায় কখনো বা হয়ে যায় কেউ —কিম্পুরুষ!

আমার শরীরের অপার্থিব এক উষ্ণতায়—ধরে রাখি 
২৮০ দিনের চৈতালি হাওয়া—সৃষ্টির স্বয়ম্ভূ উন্মাদনা।
আমার  রসনা থেকে রস নিয়ে বেড়ে ওঠে ক্ষুদ্রপোনা,
প্রাণের ভেতরে যুক্ত করি প্রাণ,আত্মায় সে আরাধনা।
শিল্পীর মমতায় আমি তাকে জরায়ু জলের কাঁথাওমে 
নিবিড় জড়িয়ে রাখি—গোপন রাজ্যের অগোপন ঘরে।
বেদনা বাহিত আসমুদ্রহিমাচল পার হতে হতে 
নিজে আমি প্রসব করি আমাকেই যেন পুনর্বার…

আত্মজা ও আত্মজের জন্মে আমি পুষ্পিত নতুন
অনিন্দ্য এক ঐশী পুলকে— ফিরে আসি এপ্রান্তরে।
তুরীয়ানন্দে ফিরে ফিরে আসি আমি সৃষ্টিগর্ভে
রহস্যময় এক কৃষ্ণ গহবর থেকে ক্ষিতি অভিমুখে—

আমি এক অর্ধনারীশ্বর,
আমি অর্ধনারীশ্বর এক ও অনন্য!
পরিপূর্ণ মানব সন্তান—এই বসুন্ধরায়।


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যারিস্টোক্র্যাটস (লেভেল-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৩২৯৬৮১৬২৫,
ইমেইল: dhakabusines@gmail.com