ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার আগে যা ভাবতে হবে


মোল্লা জালাল , : 09-11-2023

ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার আগে যা ভাবতে হবে

বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে আসার আগে কিছু বিষয়ে সাবধান থাকলে ভালো হবে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন শতশত লোক ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য আসেন। গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতে একটি ভয়াবহ মেডিক্যাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।  এটা আগে ছিল না। আমি ২০১২ সাল থেকে কোলকাতা, চেন্নাই এবং ভেলোরে চিকিৎসার জন্য আসা যাওয়া করি। কোলকাতার ফর্টিস হাসপাতালে ২০১৩ সালে আমার বাইপাস সার্জারি করা হয়। ফর্টিসের প্রখ্যাত কার্ডিও সারার্জন কেএম মান্দানা খুবই যত্ন সহকারে শতভাগ পেশাদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে  আমার অপারেশন করেন। অপারেশনের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার কোনো ধরনের অসুবিধা হয়নি। আমি খুবই ভালো ছিলাম। 

২০১৩ সালের পর আমি যতবার কোলকাতা এসেছি ততবারই ড. মান্দার সাথে দেখা করেছি। আমাকে চেকাপ করে তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার ডায়াবেটিস থাকার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে মাঝে মধ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আমি সব সময়ই ইন্ডিয়া চলে আসি।  চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফিরে যাই। ২০১২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমি কোনো হাসপাতালে কোনো দালালের খপ্পরে পড়িনি বা দালালদের দৌরাত্ম্য দেখিনি। কিন্তু ইদানিং কলকাতা ও চেন্নাইয়ের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা বাংলাদেশের লোকদের অবস্থা দেখে এবং তাদের অনেকের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারলাম, তাদের মধ্য অনেকেই মহাবিপদে পড়েছে। একটি চক্র ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে আগ্রহী লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মেডিক্যাল ভিসার জন্য ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার সংগ্রহ করে দেওয়ার সময় যে যে হাসপাতালের মার্কেটিংবিভাগের লোকদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে,  তাদের পরামর্শে ডাক্তার ঠিক করে ওই ডাক্তারের কাছে রোগী পাঠায়। 

অপারেশনের রোগীদের কতটাকা লাগবে সেটাও তারা আলোচনা করে কমিশন ভাগাভাগির শর্তে নির্ধারণ করে নেয়। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর অপারেশনের খরচ এবং রোগীর স্বজনদের থাকা খাওয়ার ব্যয় বাড়তে থাকে। এমতাবস্থায় রোগীকে ভয়াবহ সমস্যায় পড়ে দেশ থেকে বাড়িঘর জমিজমা বিক্রি করে একসময় নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এই অবস্থা আগে ছিল না। আমি গত ১২ বছরে দেখিনি কোনো হাসপাতালের মার্কেটিং বিভাগের লোকদের রোগী হ্যান্ডেল করতে। এখন এটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ ও ভেলোরের সিএমসি বাদে প্রায় সব হাসপাতালে এখন এ অবস্থা। এর কারণ মূলত ভাষাগত সমস্যা। এসব হাসপাতালের খুব সংখ্যক লোক হিন্দিভাষা জানে বা বোঝে। এরা তামিল ভাষী। টুকটাক ইংরেজি বুঝতে পারে। এই সুযোগটা নেয় হাসপাতালগুলোর মার্কেটিং বিভাগের লোকজন। এরা বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি সব ভাষাতে কথা বলতে পারে। 

আমার মতে এক্ষেত্রে রোগীর উচিত হবে হাসপাতালের ওয়েবসাইটে  সার্চ করে সঠিক ডাক্তারের সঙ্গে কনটাক্ট করে চিকিৎসা করাতে আসা। নইলে অনেক সময় বিভিন্ন উপায়ে গলাকাটার শিকার হতে হবে। আমি দেখেছি ১ থেকে দেড়লাখ টাকা খরচের অপারেশনের জন্য রোগীকে  শোধ করতে হয়েছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। আজকের বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা অনেক ফাস্ট। তারা নেটে সমগ্র দুনিয়া ঘুরে বেড়ায়। সুতরাং আপনি নিজে না পারলে ছেলেমেয়েদের বলুন। তারা আপনার রোগের সঠিক ও অভিজ্ঞ ডাক্তার খুঁজে দিতে পারবে। কারণ সব হাসপাতালেই একই বিষয়ের একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছেন। তাদের প্রোফাইল দেখলেই বুঝতে পারবেন এবং তাদের সম্পর্কে সব কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং ডাক্তার ঠিক করা বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও কঠিন কোনো কাজ নয়। অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে চলে এলে কোনো সমস্যা হবে না। 

ভারতের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো। তবে আসার আগে সব কিছু জেনে বুঝে আসবেন। বিশেষ করে কোথায় থাকবেন, কী খাবেন। হাসপাতাল থেকে থাকার হোটেলের দূরত্ব কত, হোটেলে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে কি না, হোটেল থেকে হাসপাতাল একটু দূরে হলে কিভাবে যাতায়াত করতে হবে। তবে চেন্নাইয়ের কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসলে থাকার জন্য  অ্যাপোলোর আশপাশের কোনো হোটেলে থাকলে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।  কারণ অ্যাপোলোর আশপাশে প্রচুর বাংলাদেশি এবং বাংলাভাষী মানুষ পাওয়া যায়। এখানকার অনেক হোটেলে বাঙালি খাবারও পাওয়া যায়।  

মনে রাখবেন কোনো হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে কোনো অ্যাটেনডেন্ট অ্যালাও করা হয় না। হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগেই এই বিষয়গুলো ঠিক করে নেবেন। পাশাপাশি পারত, কেউ বাংলা টাকা আনবেন না। কোলকাতার বাইরে বাংলা টাকা রুপিতে চেঞ্জ করতে গেলে রেট দেবে অনেক কম। সে-ক্ষেত্রে ডলার বা কার্ডে লেনদেন করায় সুবিধা বেশি। বিশেষ করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা এবং বিমান ও রেলের টিকিট কেনার ক্ষেত্রে। বাজার খরচের টাকা এয়ারপোর্ট থেকে চেঞ্জ করে নিলে সব চেয়ে ভালো হয়। আমার অভিজ্ঞতার বিষয়গুলো আলোচনা করলাম। কারও কাজে লাগলে লাগতেও পারে। 

লেখক : সাংবাদিক 


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যারিস্টোক্র্যাটস (লেভেল-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৩২৯৬৮১৬২৫,
ইমেইল: dhakabusines@gmail.com