পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ সব নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের মনে তীব্র ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, নিত্যপণ্যে দাম যেন লাগামহীন ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ২৪০ টাকা থেকে ভালো মানের আদার দাম ২৮০ টাকা হয়েছে। এক লাফে ৯০ টাকা পেঁয়াজের দাম কমার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। নতুন করে গরম হচ্ছে আলুর বাজার। ৪৫ টাকার নিচে আলু বিক্রি হচ্ছে না। তাদের প্রশ্ন, কোথায় দিয়ে ঠেকবে নিত্যপণ্যের দামের এই ঊর্ধ্বগতি? অন্যান্য সবজি তো বরাবরের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর কাওরান বাজার, কৃষি মার্কেট ও আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ভারতের নিত্যপণ্য রপ্তানিতে নতুন শুল্ক আরোপ করার পর বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজ, রসুনের দাম বেড়ে গেছে। আলুর দামও কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। গত সপ্তাহেও ৪০ টাকায় আলু বিক্রি হলেও আজ (শনিবার) বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। ভারতের রসুনের দাম ২৮০ টাকা, দেশি রসুন ভালো মানেরটা ২৬০ এবং একটু নিম্নমানেরটা ২৪০ টাকা।
বাজারে একটু ভালোর মধ্যে সবচেয়ে কম দামি চাল পাইজাম। প্রতিকেজি চাল ৫৫ টাকা। ২৮ চাল ৬০ টাকা, মিনিকেটের দাম শুরু হয়েছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত। মশুর ডাল মোটাটা ১০০ এবং চিকনটার দাম ১৩০ টাকা।
কাঁচাবাজারে সবচেয়ে কমদামি সবজি হচ্ছে পেঁপে। কেজিপ্রতি দাম ৩৫ টাকা। আর ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। পোটল ৫০, ঢেঁড়স ৬০, শসা ৬০, কচুমুখী ৮০, উচ্ছে ৮০, লাউ, জালি কুমড়া ৬০, পাকা টমেটো ১৪০ টাকা। দাম কমেনি কাঁচামরিচের। কেজিপ্রতি এখনো ২০০ টাকা। বেগুনের দামও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭০ টাকা।
সবচেয়ে কম দাম লেবুর। হালি ২০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা। শাকের মধ্যে পুইশাক আঁটি ৩০ এবং মুলাশাক ১৫ টাকা।
মাছের বাড়ার রীতিমতো অস্থির। গরিবের মাছখ্যাত পাঙাস ২০০-২২০, ছোট ইলিশ ৬০০, মাঝারি সাইজেরটা ১৩০০ এবং বড়টার দাম ১৮০০ টাকা। বাগদা চিংড়ি ৮০০, গলদা চিংড়ি ১০০০, শিং ৫০০, মাগুর ৪৫০, পাবদা ৪৫০, রুই ৩৮০ এবং কৈ মাছ সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা। টেংরা ছোটটার দাম ৬০০ এবং বড়টা ১১০০ টাকা। ছোট বেলে ৮০০, কাতল ৩০০।
মাংসের বাজারও নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। গরুর মাংস ৭৮০, খাসির মাংসের দাম ১১০০ টাকা, ক্রেতা নেহায়েত নাছোড়বান্দা হলে ৫০ টাকা কমাতে রাজি বিক্রেতা। লেয়ার মুরগি ৩৪০, পাকিস্তানি ৩০০, ব্রয়লার ১৮০ টাকা। ডিমের বাজার স্থির। হাসের ডিমের হালি ৭৫ এবং মুরগির ডিমের হালি ৫০ টাকা।
জিরা ১১০০, ধনে ২২০, এলাচি, ১৯৫০ থেকে ২৫০০, কিসমিস ৪২০, দারচিনি ৪৩০, লবঙ্গ ১৫২০, চিনি ১৪০, কালোজিরা ২৮০ টাকা।
তবে, সয়াবিনের দাম কিছুটা কমছে। বোতলজাত সয়াবিন ১৬৪, সয়াবিন (খোলা) ১৪০-১৫৪ টাকা। খোলা মুড়ি ৮০, চিড়া ৭০ থেকে ৮০ খোলা। আখের গুড় ১৪০ টাকা। লাল চিড়া ৮০ টাকা।
বিএনপি বাজারের বাসিন্দা রিনা। এই গৃহিণী প্রায় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মার্কেটে বাজার করতে আসেন। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সবজির দাম বাড়তি অনেক দিন ধরে। আমার স্বামীর আয় এমন, বাজার যেদিন করি, সেদির চাল, ডাল কিনতে পারি না। প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তি। যে যার মতো করে বিক্রি করছেন।’
কৃষি মার্কেটের সবজি বিক্রেতা শ্যামল বলেন, ‘আমরা আড়ত থেকে বাড়তি দামে কিনে নিয়ে আসি। আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। আর কাঁচাসবজির দাম কখনোই স্থির থাকে না। আমরা একই দাম দিয়ে সবসময় কিনতে পারি না।’
আড়তদার আজাদ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী কম দামে কোনো কিছু আমদানি করতে পারছি না। কারণ বর্তমানে ডলারের সংকট রয়েছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছি না। ভারত থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আরও বাড়তে পারে।’
সবজির আড়তদার সজিব মিয়া বলেন, ‘এখন মৌসুমি সবজির দাম কিছুটা কম। কিন্তু অন্য মৌসুমের সবজির দাম বেশি। ধরেন টমেটোর দাম কিন্তু অনেক বেশি এখন। কাঁচামরিচেরও দাম বেশি।’
ঢাকা বিজনেস/ এনই/