জীবনের স্বার্থহীন কিছু ভালোবাসার কথা না বললেই নয়। পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের বাইরেও আমার খুব সাধারণ কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় ছিল, খুব বেশি সময় তাদের সঙ্গে কাটিয়েছি, বিষয়টি এমন নয়। আর আমার এসব পরিচিত মানুষগুলো এক কথায় সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত। সমাজের চোখে ছোট পেশার মানুষ।
তাদের পেশা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। মানুষ হিসেবে তারা সম্মান পেতেই পারে। আমি বেলজিয়াম আসার আগে এক রিকশাচালকের সঙ্গে দেখা। যার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। মাঝে মাঝে ঘুরতাম। তিনি ভেজা চোখে তাকালেন আমার দিকে। বললেন, কবে চলে যাচ্ছ? আমি তার চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। শুধু বললাম, আর দুই দিন আছি।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘একটা দিন আমাগো বাড়ি খাওন যাবো? গরিব মানুষ, তবু যদি কষ্ট কইরা যাইতা।’ তার কথায় কী বলবো, বুঝতে পারছিলাম না। তবে, যাওয়া হয়নি। খুব বেশি ব্যস্ততা না থাকলে অবশ্যই যেতাম। শেষে বুকে জড়িয়ে একটা কথাই আমাকে বলছিলেন, ‘বিদেশে পড়বার যাইবা ভালো কইরা পড়ালেহা কইরো। আমরা গর্ব কইরা কমু আমাগো তারেক বিদেশ পড়ালেহা করে, আমাগো কিছু লাগবো না, তুমি ভালোমত আহোগা। আবার একসাথে রিকশা নিয়ে ঘুরমুনি। আমাগো ভুইলা যাইয়ো না। তোমার আব্বা খুব ভালো মানুষ আছিল, তোমার বাপের মতো হইও।’
চোখ মুছতে মুছতে এসব কথা বলছিলেন মানুষটা। আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। পেশা যাই হোক, তিনি আমাকে মন থেকে ভালোবাসেন, আমার ভালো চান। আর আমার জন্য দোয়া করেন। হয়তো তার ভালোবাসার মূল্য দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আর হবেও না। কারণ ভালোবাসার কোনো মূল্য হয় না। এখনো নাকি আমার কথা অনেকের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। জানতে চান, আমি কেমন আছি, আমার জন্য নাকি তার খারাপ লাগে। হয়তো তার ভালো একটা মোবাইলফোন থাকলে কথা হতো। যদি বেঁচে থাকি, তাহলে তাকে একটা মোবাইলফোন দিয়ে বলবো, ‘যখন মন চায় আমাকে ভিডিও কলে দেইখো। আমি তোমার সাথেই আছি।’
আরেক দিন লিখবো আরেকজন স্বার্থহীন ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে।
ঢাকা বিজনেস/এনই/